বাসস
  ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:০৮

চুয়াডাঙ্গায় মাটির ভাঁড় তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

ছবি : বাসস

বিপুল আশরাফ

চুয়াডাঙ্গা, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): সাধারণত খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির মৌসুম শুরু হয় শীতকালে নভেম্বর মাসে। এ সময়ে প্রয়োজন হয় অনেক মাটির ভাঁড়ের। তাই শীত মৌসুমকে সামনে রেখে জেলার জীবননগর উপজেলার দেহাটি গ্রামে ব্যস্ত সময় পার করছেন মাটির ভাঁড় তৈরির কারিগর মৃৎশিল্পীরা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভাঁড় তৈরির কারিগররা (কুমার) এঁটেল মাটি ও পানির মিশ্রণে ভাঁড় তৈরি করছেন। তৈরি ভাঁড়গুলো রোদে শুকানো হচ্ছে, পরে তা পুড়িয়ে রস রাখার উপযোগী করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও নকশায় ভাঁড়গুলো আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। 

দেহাটি গ্রামের কুমার নিতাই পাল বলেন, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাস ভাঁড় বানানোর ভরা মৌসুম। 

প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০টি ভাঁড় তৈরি করতে পারি। রস রাখার ভাঁড় বিক্রি করি ৩০ টাকা করে আর গুড় রাখার ভাঁড় বিক্রি হয় ৪০ টাকায়। তিন মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ভাঁড় বিক্রি করতে পারি। খরচ হয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

তিনি আরও জানান, আমাদের তৈরি ভাঁড় কিনতে বিভিন্ন এলাকার গাছিরা পাইকারি ও খুচরা দামে কিনতে আসে। ভাঁড় তৈরি করতে আমাদের এখানে ৫ থেকে ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। 

শ্রমিক গোপাল বলেন, ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করি। প্রতিদিন হাজিরা পাই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এই কাজ করেই পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে ভালো আছি।

আরেক শ্রমিক আন্দোপাল বলেন, আমি ভাঁড় পুড়ানোর কাজ করি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কাজ করে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত হাজিরা পাই। এই কাজের আয়ে পরিবার নিয়ে সুখে আছি। 

স্থানীয়রা জানান, ভাঁড় তৈরি করা দেহাটি গ্রামের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী পেশা। খেজুরের রস সংগ্রহের মৌসুম ঘনিয়ে এলে এই পেশায় নতুন করে প্রাণ ফিরে আসে গ্রামজুড়ে।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমীন বলেন, এটি একটি পুরাতন ঐতিহ্য যা কালের বিবর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি কোনো সহযোগিতার সুযোগ থাকে তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াবো।