শিরোনাম

ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশে করপোরেট গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠায় উৎকর্ষ সাধন এবং কোম্পানির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের স্বীকৃতি হিসেবে ৪৩টি প্রতিষ্ঠানকে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি)।
আজ এক সংবাদ বিবৃতিতে জানানো হয়, গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ১২তম ‘আইসিএসবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর করপোরেট গভর্ন্যান্স এক্সিলেন্স-২০২৪’ প্রদান করা হয়। এবারের অ্যাওয়ার্ডের থিম ছিল ‘প্রমোটিং গভর্নিং এক্সেলেন্স’।
আইসিএসবির নির্ধারিত মান অনুযায়ী ২০২৪ সালে করপোরেট গভর্ন্যান্স, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় কোম্পানিগুলোর প্রচেষ্টা এবং বিএসইসির করপোরেট গভর্ন্যান্স কোডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালনার ভিত্তিতে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে ১৪টি ক্যাটেগরিতে বিজয়ী ৪৩টি কোম্পানিকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। গোল্ড, সিলভার ও ব্রোঞ্জ— তিন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। গেস্ট অব অনার ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়-সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন এবং ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া।
আইসিএসবির সভাপতি হোসেন সাদাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট গভর্ন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল্লাহ আল মামুন করপোরেট গভর্ন্যান্স অ্যাওয়ার্ডিং চার্টারের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘করপোরেট গভর্ন্যান্স এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড শুধু স্বীকৃতির প্রতীক নয়, বরং আমাদের দেশে উদাহরণযোগ্য করপোরেট গভর্ন্যান্স চর্চার মানদণ্ড। আমি নিশ্চিত, এই ইনস্টিটিউট দক্ষ, নৈতিক ও দূরদর্শী গভর্ন্যান্স পেশাজীবীদের নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে থাকবে, যারা বাংলাদেশের করপোরেট ভবিষ্যৎ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, আইসিএসবি নৈতিক নেতৃত্ব ও পেশাগত উৎকর্ষ প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে করপোরেট গভর্ন্যান্স শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ গঠনে শক্তিশালী গভর্ন্যান্সকে কেন্দ্রীয় অবস্থানে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, যারা পেশাদারিত্বের মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিচ্ছেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ রক্ষা করছেন— তাদের স্বীকৃতি দিতে আইসিএসবি’র এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এ ধরনের আয়োজন প্রতিষ্ঠানগুলোকে করপোরেট গভর্ন্যান্সে উৎকর্ষ বজায় রাখতে এবং অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করতে অনুপ্রাণিত করে।
বিএসইসি কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন বলেন, নিয়ম-নীতি মেনে চলা ও নৈতিক ব্যবস্থাপনা প্রচারের মাধ্যমে শক্তিশালী গভর্ন্যান্স শুধু অংশীজনদের আস্থা বাড়ায় না, বরং বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও আকর্ষণও বৃদ্ধি করে।
এফআরসি চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স যেকোনো প্রতিষ্ঠানের আস্থা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তি। আইসিএসবি করপোরেট গভর্ন্যান্স এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ডের মতো স্বীকৃতি শুধু সেরা চর্চাকে সম্মান জানায় না, বরং প্রতিষ্ঠানগুলোকে নৈতিক আচরণ, বিনিয়োগকারীর আস্থা এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব শক্তিশালী করতে অনুপ্রাণিত করে।
স্বাগত বক্তব্যে আইসিএসবি সভাপতি হোসেন সাদাত জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে করপোরেট গভর্ন্যান্স অগ্রগতিতে যৌথ প্রতিশ্রুতির আহ্বান জানান। তিনি বিদ্যমান কোম্পানি আইনে আইসিএসবি জমাকৃত সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে আইনটিকে আরো প্রগতিশীল ও ভবিষ্যতমুখী করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।
এর আগে করপোরেট গভর্ন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল্লাহ আল মামুন মূল্যায়ন প্রক্রিয়া তুলে ধরেন এবং বিধিবদ্ধ প্রয়োজনীয়তা ও বৈশ্বিক সেরা চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যের ওপর গুরুত্ব দেন।
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে আইসিএসবি কাউন্সিল সদস্য মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সরকারি কর্মকর্তা, পেশাজীবী, ইনস্টিটিউটের সদস্য এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
অতিথিরা বাংলাদেশের করপোরেট খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আইসিএসবি’র ভূমিকার প্রশংসা করেন।