শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): মানসম্মত পণ্য উৎপাদন,নকল ও নিম্নমানের পণ্য রোধ এবং আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের সমন্বিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ।
বিশ্ব মান দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আজ রাজধানীতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। দিবসটিতে এবারের প্রতিপাদ্য ‘সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে-মান’।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।
বিএসটিআই মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী এবং এফবিসিসিআই’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান মো. জাফর ইকবাল।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কেবল কোনো একক প্রতিষ্ঠানের নয়। উৎপাদক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ভোক্তা-এই তিন পক্ষের সমন্বিত প্রয়াসেই মান নিশ্চিত হয়।
শিল্প সচিব বলেন, বিএসটিআই এখন যে অবস্থানে আছে সেটা অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ব মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে মনে করি। বিএসটিআইতে স্থাপিত ন্যাশনাল হালাল ল্যাবরেটরিসহ অনেক ল্যাবরেটরি রয়েছে যেগুলো আন্তর্জাতিক মানের। বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স গ্রহণের পর সে মান বজায় রেখে পণ্য বাজারজাত করার জন্য তিনি ব্যবসায়ীদেরকে অনুরোধ জানান।
ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু রমজান মাসে নয়, সারা বছর নৈতিকভাবে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করতে হবে। ‘বিশ্বের অনেক দেশ উৎসবকালে পণ্যের দাম কমায়, অথচ আমরা পারি না-এখানে আমাদের নৈতিকতার ঘাটতি রয়ে গেছে।’
তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের লেখনী ও প্রতিবেদন মানুষের মধ্যে মান সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা চাই, বিএসটিআই’র কার্যক্রম সম্পর্কে আপনারা জনগণকে অবহিত করুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাজ ব্যবসা করা নয়, বরং নীতি ও তদারকি নিশ্চিত করা। আমরা চাই উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসুন, মান উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষম বাংলাদেশ গড়ে তুলুন।’
ক্যাবের সভাপতি সাবেক সচিব এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান বলেন, অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী হালাল সনদ প্রদান করা বিএসটিআই’র কাজ। এখানে আন্তর্জাতিক মানের হালাল ল্যাবরেটরি রয়েছে। হালাল সনদকে প্রমোট করতে পারলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের হালাল পণ্যের রপ্তানি বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। পণ্য ভেজাল ও নকলকারীদের বিরুদ্ধে বিএসটিআইকে আরও কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, বিগত কয়েক বছরে বিএসটিআই’র ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। বিএসটিআই বাংলাদেশে কোয়ালিটি প্র্যাকটিসের প্রতিচ্ছবি। এখানে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি রয়েছে। আমরা ব্যাবসায়ীরা এ সকল ল্যাবরেটরির সুবিধা কাজে লাগাতে চাই।
এছাড়া তিনি হালাল ল্যাবরেটরি অ্যাক্রেডিটেশন, নতুন নতুন ক্ষেত্রে মান প্রণয়ন, মানের সরলীকরণ এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মান প্রণয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে নজর দিতে বিএসটিআই’র প্রতি অনুরোধ জানান।
বিএসটিআই মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম শিল্প উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক মান মেনে চলার উপর জোর দিয়ে বলেন, ‘বিদেশি বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কঠোর মান নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেশগুলো পণ্য গ্রহণ করে, তাই আমাদেরকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে সাপ্লাই চেইনকে তৈরি রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, দেশে প্রচলিত ভেজাল ও নকল পণ্য-বিশেষ করে কসমেটিকস ও খাদ্যদ্রব্য ভোক্তাদের স্বাস্থ্যে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। সাম্প্রতিক অভিযানে কোনো কোনো কসমেটিকসে হাইড্রোকুইনোনের মাত্রা অনুমোদিত হার থেকে হাজার গুণ বেশি পাওয়া গেছে। যা দীর্ঘ মেয়াদে কিডনি ও লিভারসহ শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষ করে কিশোরী ও গর্ভবতী নারীদের জন্য তা ঝুঁকিপূর্ণ। এই ধরনের পণ্যের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা ও ভোক্তা সুরক্ষা সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিগত এক বছরে বিএসটিআই’র উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে মহাপরিচালক বলেন, বিএসটিআই মানচিহ্ন নকল ও অবৈধ ব্যবহার প্রতিরোধে অনলাইন কিউআর কোড সম্বলিত লাইসেন্স প্রদান, জাতীয় হালাল ল্যাবরেটরি স্থাপন, হেলমেট টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন, সোলার প্যানেল টেস্টিং ল্যাবরেটরি, সিমেন্ট টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনসহ স্বর্ণের বিশুদ্ধতা যাচাইপূর্বক সনদ প্রদান, মাঠ পর্যায়ে বিএসটিআই’র প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় চালু, পণ্য পরীক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানের নতুন নতুন ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং বিদ্যমান ল্যবরেটরিসমূহে নতুন নতুন পণ্য পরীক্ষণ প্যারামিটার সংযুক্তিকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সভায় সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।