বাসস
  ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:২০

ভবন আছে, কর্মী নেই: সংকটে মাদারীপুর আইএইচটি

মাদারীপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি)। ছবি : বাসস

বেলাল রিজভী

মাদারীপুর, ৩ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): জেলায় ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বহুতল ভবন। আছে ল্যাবরেটরি, ক্লাসরুম, আবাসিক ব্যবস্থা সবই কাগজে কলমে আধুনিক।

অথচ বাস্তবে সেখানে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী, নেই ছয় মাস ধরে বিদ্যুৎ। ফলে কোটি টাকার অবকাঠামো দাঁড়িয়ে থাকলেও কার্যত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে মাদারীপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি)।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে মোট তিনটি চার বছর মেয়াদি কোর্স রয়েছে ল্যাবরেটরি, রেডিও গ্রাফি ও ফার্মাসি। নিয়ম অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৪৭ জন শিক্ষক ও কর্মচারী থাকার কথা। কিন্তু সরকারিভাবে এখানে একজনও স্থায়ী শিক্ষক বা কর্মচারী নেই। বর্তমানে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তারা সবাই অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অস্থায়ীভাবে পেরেশনে এসেছেন। ফলে পাঠদান থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যক্রম পর্যন্ত সবই চলছে খন্ডকালীন ব্যবস্থাপনায়।

স্থায়ী শিক্ষক সংকটের কারণে পড়াশোনা নির্ভর করছে গেস্ট টিচারের ওপর। বর্তমানে মাত্র ১০ জন গেস্ট টিচারের মাধ্যমে তিনটি কোর্স চালানো হচ্ছে। 

জানাগেছে, মাদারীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দারবালী মৌজায় ৩২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ তলাবিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

পরে ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এটির উদ্বোধন করা হয়। বিজ্ঞান গ্রুপ থেকে এসএসসি পাস করার পরে চার বছর মেয়াদী এই কোর্সগুলোতে ভর্তি হবার সুযোগ রয়েছে।

উদ্বোধনের পর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তিনটি কোর্সে এখানে ৩৮০ জন শিক্ষার্থী আছেন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মাদারীপুর জেলার বাইরের। 

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজুর রহমানের মূল কর্মস্থল ফরিদপুরে হওয়ায় তিনি নিয়মিত মাদারীপুরে থাকতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ কারণে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতি তৈরি হচ্ছে এবং শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অন্যদিকে নির্মিত ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগও দীর্ঘ ছয় মাস ধরে বিচ্ছিন্ন। ওজোপাডিকো জানায়, ১২ লাখ ৪১ হাজার ৫৪ টাকা বিল বকেয়া থাকায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর আগেও একই কারণে একবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।

ফলে প্রচন্ড গরমে শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা খরচ করে অবকাঠামো বানানো হলেও ন্যূনতম পরিচালন ব্যয় ও জনবল সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে।

ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থী তৃষ্ণা বলেন, ‘বিদ্যুৎ নেই, শিক্ষক নেই। আমরা খুব কষ্টে পড়াশোনা করছি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান দরকার।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অধ্যক্ষ নিয়মিত থাকেন না। শিক্ষকও নেই। স্থায়ী লোকবল ছাড়া আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে।’

অফিস সহকারী মো. বায়েজিদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় মার্চ থেকে সংযোগ বন্ধ আছে। আর শিক্ষক সংকট মেটাতে গেস্ট টিচার দিয়েই কোনোভাবে পাঠদান করা হচ্ছে। আমি নিজেও এখানকার নিয়মিত স্টাফ না। আমার  মূল পোষ্টিং ঢাকাতে।’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ে লোকবল চেয়ে চিঠি দিয়েছি। ৪৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তা বাস্তবায়ন হলে সংকট কেটে যাবে।’

শিক্ষার্থীদের ভাষায়, ‘ভবন আছে, কিন্তু কর্মী নেই’ বাস্তবতার মধ্যেই চলছে মাদারীপুর আইএইচটি। স্থায়ী জনবল ছাড়া, বিদ্যুৎহীন অচল ভবনে কোটি টাকার বিনিয়োগের সুফল পাচ্ছে না সাধারণ শিক্ষার্থী।