শিরোনাম
।। আল-আমিন শাহরিয়ার।।
ভোলা, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলার সর্ব দক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশন। ১ হাজার ১০৬ দশমিক ৩১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ জনপদে ৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। জেলা সদর ভোলা থেকে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরফ্যাশনের দূরুত্ব দেড়শ' কিলোমিটার। আঞ্চলিক হাইওয়ে সড়কে চরফ্যাশনের সাথে জেলা সদরের নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ থাকলেও সেখানকার মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের মোকাম হচ্ছে রাজধানী ঢাকা। আর ঢাকার সাথে ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের যোগাযোগ হয়ে থাকে লঞ্চযোগে।
তথ্য অনুযায়ী, চরফ্যাশনের যে ক'টি লঞ্চঘাট রয়েছে, তারমধ্যে বেতুয়া ঘাটটিই সবচাইতে বৃহৎ ও যাত্রীবহুল। জুলাই বিপ্লবের পর অর্ন্ততীকালীন সরকারের নৌ পরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম শাখাওয়াত হোসেনের হস্তক্ষেপে বেতুয়া ঘাটটিকে আরো উপযোগী ও বাস্তবসম্মত করতে আধুনিক নৌ-টার্মিনালে রুপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই আলোকে সরকার সেখানে বেতুয়া আধুনিক নৌ টার্মিনাল নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। তিনতলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক এ টার্মিনালটি উপকূলীয় জেলা ভোলার একমাত্র দৃষ্টিনন্দন লঞ্চ টার্মিনাল।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যানুযায়ী জনসাধারণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক ও ঝুঁকিমুক্ত ভ্রমণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিগত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই টার্মিনালটির প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও ফ্যাসিস্ট জমানায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এটির নির্মাণ কাজ ছিলো স্থবির। অবশেষে জুলাই বিপ্লবের পর নৌ পরিবহন উপদেষ্টার নির্দেশনায় উক্ত টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে খুব দ্রুতগতিতে শেষ হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বেতুয়া নদীর পাড়ে ৮ শতাংশ জমির উপর সাড়ে ৩ হাজার স্কয়ার ফিটের তিনতলা বিশিষ্ট আধুনিক লঞ্চ টার্মিনালটি নির্মিত হয়। উন্নতমানের অবকাঠামো ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ভবনটিতে যাত্রীদের ভ্রমণে অপেক্ষার জন্য আরামদায়ক ভিআইপি ওয়েটিংরুম, বিশ্রামাগার, সহজ প্রবেশাধিকার ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রেস্টুরেন্ট, আধুনিক স্যানিটেশন ও বন্দর অফিসের ব্যবস্থাপনা রয়েছে। পাশাপাশি টার্মিনাল থেকে নিরাপদে পন্টুন ও লঞ্চে ওঠানামার জন্য রয়েছে শক্তিশালী গ্যাংওয়ে।
এবিষয়ে কথা হয় সেখানকার বাসিন্দা শাহে আলম, আবুল হোসেন ও গৃহিনী রাশিদা বেগমের সাথে। তারা সকলেই বলেন, এই টার্মিনাল চালু হলে সেখানকার যাত্রীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি ওই অঞ্চলে আরামদায়ক ভ্রমণ ও পরিবহন ব্যবস্থার আরও উন্নতি হবে। ফলে দ্রুত ও সহজে বাজারের ব্যবসায়ীরা মোকাম থেকে লঞ্চযোগে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এতে জনবহুল চরফ্যাশনবাসীর জন্য এ টার্মিনাল অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও ঘাট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বেচা-কেনা বাড়বে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি কমে আসবে।
এ ব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি বাসস'কে বলেন, চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া ঘাটের আধুনিক লঞ্চ টার্মিনালের কাজ সুন্দরভাবে শেষ হয়েছে। টার্মিনালটি উদ্বোধন করবেন, নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা। ভবনটি চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে উদ্বোধন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)'র বরিশাল বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল আলম বলেন, গ্যাংওয়েসহ ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চরফ্যাশনের বেতুয়া আধুনিক লঞ্চ টার্মিনালের কাজ শেষ হয়েছে। খুব শিগগিরই এটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধিতে সংস্থার প্রকল্পে এই ভবনটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আধুনিক এ ভবনটি নির্মাণের ফলে যাত্রী ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, উন্নত পন্টুন ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে উপকূলের নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও নিরাপদ করবে বলে মনে করছেন তিনি।