বাসস
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:২৪

নৌ-পুলিশে জনবল ও নৌযান ঘাটতি

ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : নদীপথের বিস্তীর্ণ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অননুমোদিত মাছ ধরার নৌকা ও বাল্কহেডের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য জনবল ও নৌযান ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে নৌ-পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (দক্ষিণ বিভাগ) মো. আব্দুল ওয়ারিশ বাসস’কে বলেন, আমরা মূলত টহল দিয়ে নদীপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি।

তিনি আরও জানান, টহল দেওয়ার সময় তারা তিন ধরনের নৌযান ব্যবহার করেন, যার মধ্যে রয়েছে স্পিড বোট, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ফাইবার বোট। তবে, বেশিরভাগ সময় নৌ-পুলিশকে স্থানীয়ভাবে নির্মিত ইঞ্জিনচালিত নৌকার ওপরই ভরসা করতে হয়।

অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার অন্তর্ভুক্ত চারটি জোনের নদীপথের বিস্তীর্ণ এলাকা টহল দিতে তারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

মো. আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে ৬০০ থেকে ৭০০ নৌ-পুলিশ সদস্য রয়েছে, যা তার অধিক্ষেত্রের আওতাধীন বিশাল নদীপথগুলো কভার করার জন্য পর্যাপ্ত নয়।

তিনি আরো বলেন, বেশিরভাগ সময় নদীপথগুলোতে টহল দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার করতে হয় নৌ-পুলিশকে। তাই, আমরা দক্ষিণ বিভাগের ১০০টি অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছি এবং সেখানে সার্বক্ষণিক টহল নিশ্চিত করেছি।

অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, নদী পথে সাধারণত স্পিড বোট, পণ্যবাহী বাল্কহেড এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ডাকাতি বা ডাকাতির চেষ্টা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

তিনি আরো বলেন, কিন্তু, নৌ রুটে অপরাধ এখন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। কারণ, আমাদের নিয়মিত টহল চলছে এবং অপরাধ সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে নৌ-পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকার অতিরিক্ত ডিআইজি (উত্তর বিভাগ) মো. কাইয়ুমুজ্জামান খান বলেন, নদীপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য টহলের পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্যের ওপরও নির্ভর করতে হয়।

সারাদেশে নৌ-পুলিশের ১১টি জোন রয়েছে। এর মধ্যে চারটি দক্ষিণ বিভাগের অধীনে এবং সাতটি উত্তর বিভাগের অধীনে। নৌ-পুলিশ সারাদেশে ১২২টি আউটপোস্টের (দক্ষিণ বিভাগে ৫৮টি এবং উত্তর বিভাগে ৬৪টি) মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জনবল রয়েছে প্রায় ২ হাজার জন।

২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট হিসেবে নৌ-পুলিশ যাত্রা শুরু করে।

নৌ-পুলিশ বিধিমালা ২০২০ এর ৭ নম্বর বিধি অনুসারে, নৌ-পুলিশের কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে নৌ-পরিবহন, পণ্য, যাত্রী, বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ; ফেরি ও ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, লঞ্চ টার্মিনাল, নৌ-টার্মিনাল এবং নোঙর ঘাটে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা; চোরাচালান, মাদক পাচার, মানব পাচার, অবৈধ অস্ত্র ও অন্যান্য সংগঠিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

দেশব্যাপী চলমান অভিযানে নৌ-পুলিশ গত সাতদিনে মাছ ধরার ২ কোটি ৭৫ লাখ মিটারেরও বেশি অবৈধ জাল জব্দ করেছে। দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও পানিপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তারা ২৬৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।

অভিযানের সময় মাছ ধরার জাল ছাড়াও ২ হাজার ১৩৩ কেজি মাছ এবং ৩২০ কেজি জেলি মেশানো চিংড়ি জব্দ করা হয়েছে।

গত সাতদিনের অভিযানে ৬২টি মামলায় মোট ২৬৬ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার মধ্যে ৩৪টি মৎস্য আইনে, ১২টি বেপরোয়া নৌ-যান চালানোর জন্য, সাতটি অননুমোদিতভাবে বালু উত্তোলনের জন্য, চারটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায়, একটি চুরির জন্য, একটি মাদক পাচারের জন্য এবং একটি হত্যার জন্য দায়ের করা হয়েছে।

সপ্তাহব্যাপী অভিযানে ৯৭টি বাল্কহেডের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে ছয়টি ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে।