শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশে আর কোনোদিনই রক্তপিপাসু ও গণতন্ত্র ধ্বংসকারী শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঘটবে না।
তিনি বলেন, কখনোই কোনো রক্ত পিপাসু, গণতন্ত্র ধ্বংসকারী এবং নিজের দেশের মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হওয়ার ভাসনায় যে ‘বাংলাদেশি মডেলের ফ্যাসিবাদ’ কায়েম করেছিলেন শেখ হাসিনা, সেই ফ্যাসিবাদের পুনর্জাগরণের কোনো সুযোগ এদেশে নেই। এদেশের মানুষ ধর্মভীরু হলেও গণতন্ত্রপ্রিয়, তারা নির্ভয়ে কথা বলতে চায়। এমনকি এক-দুই বেলা কম খেলেও তারা তাদের কণ্ঠস্বরকে উচ্চকিত করতে চায়।
তাই কাউকে জোর করে ফ্যাসিবাদের নতুন ধারায় টেনে আনা সম্ভব নয়।
আজ বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রিজভী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন সংলাপগুলো ভয়ংকর। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দিতেন, সেই ভয়াবহ কথোপকথনগুলো এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হচ্ছে। এসব শুনলে যে কেউ শিহরিত হয়ে উঠবে। আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছি, রাজনীতি করেছি, তারা প্রত্যেকে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম। শেখ হাসিনার বর্বরতা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি-রিমান্ড, কারাগার, নির্যাতন-সবই আমাদের জানা। কিন্তু এখন আদালতে যে প্রমাণ হাজির হচ্ছে, তা আরও ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরছে।’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি এই ফ্যাসিবাদী শক্তির আবার পুনরুত্থান ঘটে, তাহলে ৫ আগস্টের আন্দোলনকামী ও গণতন্ত্রকামী মানুষের কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে, তা চিন্তা করলেই গা শিহরে ওঠে।
টেলিফোন কথোপকথন থেকেই বেরিয়ে আসছে, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার নির্দেশ, সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ, মেট্রোরেল স্টেশনে আগুন লাগানো-এসব শেখ হাসিনার নির্দেশেই হয়েছে। অথচ সেসব নাশকতার দায় চাপানো হয়েছিল আন্দোলনকারীদের ওপর।’
রিজভী বলেন, ‘মেট্রোরেল স্টেশন পোড়ানোর মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছিল, নজরুল ইসলাম খানসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অথচ এখন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, এসব ঘটনার নির্দেশনাই দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা নিজে। তিনি এমন এক সর্বনাশা খেলায় মেতেছিলেন যার ফলে দেশ, জাতি এবং মানুষের জানমাল মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়েছিল।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে অতীতের নানা অভিজ্ঞতা ও সংগ্রাম বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হয়ে আছে। সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে তিনি দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রপ্রিয়, তারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে চান। রাজনৈতিক মতভেদ থাকা স্বাভাবিক, তবে তা যেন গণতান্ত্রিক চর্চা ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়।’
পতিত ফ্যাসিবাদের সঙ্গে কতিপয় রাজনৈতিক দলের আঁতাত প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে যারা বলেন, ফ্যাসিস্টদের প্রত্যাবর্তন ঘটানোর জন্য চিন্তা করছেন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য চিন্তা করছেন তারা কী ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষা নেননি? আমাদের দেশে একটি রাজনৈতিক দল বরাবরই আমার মনে হয়েছে আওয়ামী লীগকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করছে, তারা এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছেন শহীদ জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে। শহীদ জিয়া তাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন।’
উদাহরণ তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘৮৬ সালে নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা নির্বাচনে গেছে। আওয়ামী লীগ মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এক আর কাজ করেছে আরেক। ঠিক একইভাবে তারাও করেছে। এরপরে আমরা দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ যে জ্বালাও- পোড়াওয়ের আন্দোলন করেছিলো সেই আন্দোলনে তারাও ছিল।’