শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): সাংবাদিকদের অধিকার আদায় এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিতে আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তরা আজ এ কথা বলেন। বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, রুহুল আমিন গাজী সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ছিলেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পেছনে কে আছেন তা দেখতেন না। সবসময় সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতেন।
আলোচনা ও স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন ডিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম। আলোচনায় অংশ নেন বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি ও যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার, আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন ও সরদার ফরিদ আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক ড. মাহবুব হাসান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন, ডিআরইউ সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও ইলিয়াস হোসেন, বিএফইউজে সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার, ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসিন, পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন জামিল, সিনিয়র সাংবাদিক মোদাব্বের হোসেন, রফিক মোহাম্মদ, আবু বকর, দিদারুল আলম দিদার, শাহনাজ পলি ও লাবিন রহমান।
রুহুল আমিন গাজী ছিলেন সৎ, নির্ভীক ও সাহসী সাংবাদিকতার প্রতীক এ কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকতা জীবনে তিনি কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেননি। সাহসী সাংবাদিকতা চর্চায় তার অবস্থান ধরে রাখায় সাংবাদিকদের কাছে তিনি আদর্শ ছিলেন।
রুহুল আমিন গাজীর কর্মময় জীবন তুলে ধরে বক্তারা আরও বলেন, রুহুল আমিন গাজী জাতিকে বহু সেবা দিয়েছেন। তিনি সংবাদকর্মীদের অধিকার আদায়ে আমৃত্যু কাজ করেছেন নিরলসভাবে। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে তার কোনো বিকল্প ছিল না। ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যায়ের বিরোধিতা করে ১৭ মাসের বেশি সময় কারাবরণ করতে হয়েছে বরেণ্য এই সাংবাদিককে। তবুও তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পিছপা হননি। রুহুল আমিন গাজী মানুষ হিসেবে সজ্জন ছিলেন।
বক্তারা বলেন, আপাদমস্তক একজন সাংবাদিক হিসেবে সবসময় সত্যের পক্ষে কথা বলার সাহস জুগিয়েছেন তিনি। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার যে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা তা লালন করি। রুহুল আমিন গাজীর আদর্শ ও তার দেখানো পথ বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্ম অনুসরণ করবে। সাংবাদিক নেতা হিসেবে দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন রুহুল আমিন গাজী।
বক্তারা বলেন, রুহুল আমিন গাজী ছিলেন নির্যাতিত ও মজলুম সাংবাদিক। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্দেশে তাকে বিনা বিচারে, বিনা অপরাধে ১৮ মাস কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেই সময় তাকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয়নি, এমনকি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও খাবার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বহু সাংবাদিক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেছিলেন। কিন্তু রুহুল আমিন গাজী কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। গণতন্ত্র রক্ষায় আজীবন সামনের সারিতে থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন।
বক্তারা বলেন, রুহুল আমিন গাজীর শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। তিনি এমন এক সময় চলে গিয়েছেন যখন তার প্রয়োজন খুব বেশি ছিল। দেশের গণমাধ্যমে সাহসী ভূমিকা সততা, বিশ্বস্ততা এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন সাংবাদিক সমাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বাধিক এবং সর্বমহলে। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সংবাদ প্রকাশ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সবসময় কথা বলেছেন। রুহুল আমিন গাজী সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়ে নেতৃত্বে নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়েছিলেন যে, তার সাথে তুলনা করার মতো এখন কেউ নেই। তিনি সাংবাদিক নেতৃত্বের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে, সহকর্মীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।