শিরোনাম
খুলনা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সম্প্রতি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে শিল্প পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, যা খুলনা অঞ্চলের কল-কারখানায় শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।
শিল্প পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে শ্রমিক অসন্তোষ মোকাবিলা এবং শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিষ্পত্তি করে আসছে। এ উদ্যোগ শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করছে।
সূত্রমতে, ২০১৬ সালে খুলনাতে শিল্প পুলিশ-৬ গঠন করা হয়। প্রাথমিকভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খালিশপুর থানাধীন পিপলস জুট মিলস লিমিটেডের জরাজীর্ণ নিরাপত্তা ক্যাম্পে অবস্থান করতেন। সেখান থেকে তারা শহরের শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক বিষয়ক সমস্যা সমাধান করতেন।
পরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার রাজঘাটে সাব-জোন ২ প্রতিষ্ঠিত হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেই জেলার শিল্প এলাকাগুলোও পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। পর্যাপ্ত থাকার জায়গার অভাবে তারা যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রির একটি পরিত্যক্ত ভবন থেকে কয়েক বছর কার্যক্রম চালান।
সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খুলনা শিল্প পুলিশ পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়েছে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন শিল্প পুলিশ-৬ এর সুপারিনটেনডেন্ট মোহাম্মদ আনছার উদ্দিন। তার নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান, বাহিনীর সুযোগ-সুবিধা উন্নতকরণ এবং শিল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তার নেতৃত্বে ব্যারাকগুলো সংস্কার, খাওয়ার সুবিধা উন্নত, নিরাপদ পানি ও বিদ্যুৎ নিশ্চিত এবং সাব-জোন ২ এর কর্মকর্তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সুপারিনটেনডেন্ট মোহাম্মদ আনছার উদ্দিন বাসসকে বলেন, নিয়মিত কারখানা পরিদর্শন, মালিক-শ্রমিক বৈঠক, ওপেন হাউস, কমিউনিটি পুলিশিং এবং সচেতনতামূলক প্রচারণার মতো পদক্ষেপ বাড়ানো হয়েছে, যাতে শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা যায়।
তিনি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)-এর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে মোংলা ইপিজেডে ৩৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে প্রায় ১ হাজার ৪৫৮ জন শ্রমিক কর্মরত। এটি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, বাগেরহাটে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবরোধ এবং ধর্মঘটের কারণে মোংলা ফেরি ও সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে, যা ইপিজেডের উৎপাদন এবং রপ্তানি সূচির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে চীন, কোরিয়া এবং জাপানি বিনিয়োগকারীদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিল্প পুলিশ-৬ মোংলা ইপিজেডে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে।
২০২৫ সালের মে মাসে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য খুলনা থেকে ৫০ জন কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয় এবং মালিক-শ্রমিকদের মধ্যস্থতায় বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়।
একইভাবে, ২৬ জুন দৌলতপুর জুট মিলস লিমিটেডের লিজ নেওয়া প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত ইউনিয়ন ফুটওয়্যার টেকনোলজি লিমিটেড কর্মী ছাঁটাই করে। পরের দিন শ্রমিকরা অবস্থান ও বিক্ষোভ করে। তবে শিল্প পুলিশ কর্মকর্তা ও মোবাইল টিম মোতায়েনের কারণে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
শিল্প পুলিশ-৬ মজুরি-সংক্রান্ত বিরোধগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে মেঘনা সিমেন্ট মিলস লিমিটেড এবং শাহনেওয়াজ সি ফুডস লিমিটেডের বিক্ষোভসহ অন্যান্য মামলায়ও হস্তক্ষেপ করেছে।
নাগরিক সমাজের বিভিন্ন নেতারা খুলনা অঞ্চলের মোংলা-ইপিজেডের আওতাধীন কল-কারখানাগুলোতে পরিবেশ-বান্ধব পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
বৃহত্তর খুলনা অ্যাকশন কো-অর্ডিনেশন কমিটির (জিকেডিএসিসি) সভাপতি শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন লজিস্টিক-সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং তাদের আন্তরিক মনোভাবের কারণে ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা এবং শিল্প খাতের অতীতের গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে ।