শিরোনাম
ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস): গ্রাম আদালতকে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায়বিচারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আজ জেন্ডার-সংবেদনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রামীণ আদালত সেবার গুরুত্ব- শীর্ষক এক জাতীয় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে সাশ্রয়ী মূল্যে আইনি সহায়তা প্রদানে গ্রাম আদালত স্থানীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা এড়িয়ে সহজে ও দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং গ্রাম আদালতের কার্যক্রমে নারী নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বৃদ্ধি সহ প্রান্তিক জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা যার মাধ্যমে গ্রামীণ আদালতগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায়বিচারের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করা সম্ভব।
অনুষ্ঠিত গোল টেবিল বৈঠকে গ্রামীণ নারী ও প্রান্তিক জনগণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় পরিচালিত বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্পের উদ্যোগে এই বৈঠক আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মুমতাজ আহমেদ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদী ও ইউএনডিপির সিনিয়র গর্ভানেন্স তানভীর মাহমুদ। এছাড়া, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উন্নয়ন সংস্থা, একাডেমিয়া ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন
বৈঠকের সঞ্চালনায় ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক সুরাইয়া আক্তার জাহান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদী বলেন, গ্রাম আদালতকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হলে নারীর অন্তর্ভুক্তিকে বাধ্যতামূলক করা জরুরি।
তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম, স্থানীয় সরকার ও সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সহযোগিতা প্রয়োজন। উচ্চ আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা ও ব্যয়ের বিকল্প হিসেবে গ্রাম আদালত ইতোমধ্যে কার্যকর সমাধান হিসেবে কাজ করছে। এখন দরকার আরও প্রচার, প্রশিক্ষণ ও সামাজিক সচেতনতা। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে সরকারের মাধ্যমে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমাদের কাজ চলমান বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রকল্পের জেন্ডার এনালিস্ট শামীমা আক্তার শাম্মী।
গতবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত গ্রামীণ আদালতে মোট ১ লাখ, ৩৬ হাজার ৮০৮টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬ হাজার, ৯৬২টি নারী আবেদনকারীর মামলা ছিল। এ সময়ে উচ্চ আদালত থেকে ১৪, হাজার ২১৪টি মামলা রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে দায়েরকৃত মামলার মধ্যে ১৫ শতাংশ মামলার আর্থিক মূল্য ৭৫ হাজার টাকার বেশি এবং ২ দশমিক ৫ শতাংশ মামলা স্ত্রী কর্তৃক বকেয়া ভরণপোষণ আদায় সম্পর্কিত। এই বাস্তবতা ইঙ্গিত করে যে, কেবল আইনি সংস্কার যথেষ্ট নয়; বরং সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুমতাজ আহমেদ বলেন, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় হতে নারী শিশু এবং উন্নয়ন বিষয়ে পরিচালিত সব প্রকল্প ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে আমরা গ্রাম আদালত সম্পর্কিত সচেতনতার তথ্য সম্পৃক্ত করা গেলে গণসচেতনতায় একটি ভালো ফলাফল আমরা আশা করতে পারি। একইসাথে বিচারকার্যে নারীদের বিচারক হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। গ্রাম আদালতকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হলে এর তথ্য প্রচার করতে হবে এবং পাঠ্যপুস্তকেও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বাংলাদেশের ৬১টি জেলার ৪৪৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এটি নি:সন্দেহে আনন্দের বিষয়।
এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহানা সারমিন, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হাজেরা খাতুন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, চ্যানেল আইয়ের চিফ নিউজ এডিটর মীর মাশরুর, জেন্ডার লিড শারমিন ইসলাম এবং হেড অব কমিউনিকেশন মো. আব্দুল কাইয়ুম সহ আরো অনেকে।