বাসস
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৬

সাবেক ভুমিমন্ত্রী জাবেদের বিরুদ্ধে দুদকের আরো ২ মামলা

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম, ২৩ সেপ্টম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দুই শিল্পপতির কাছ থেকে ৭৫ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এক্ষেত্রে অভিনব কৌশল ব্যবহার করেন জাবেদ।

দুদক বলছে, মন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুই শিল্পপতিকে চাপ দিয়ে নিজ মালিকানাধীন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাক লিমিটেড (ইউসিবিএল) থেকে ৭৫ কোটি টাকা ঋণ নিতে বাধ্য করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। পরে সেই টাকা তাদের কাছ থেকে নিয়ে নিজের পারিবারিক শিল্পগোষ্ঠী আরামিট গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তার নামে ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে সেগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করেন। এরপর সেই টাকা বিদেশে পাচার করেন।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে মামলা দু’টি করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক রুবেল হোসেন।

দুই শিল্পপতি হলেন- চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এইচএম শিপব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সরোয়ার আলম এবং নগরীর কালুরঘাটের ওয়েলমার্ট লিমিটেডের (টেক্সটাইল) সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম।

জানা গেছে, এইচএম শিপব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের পারিবারিক মালিকানায় থাকা মোস্তফা হাকিম গ্রুপের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান৷ সরোয়ার আলম সাবেক মেয়রের ছেলে। মনজুর বিএনপির মনোনয়নে মেয়র হলেও সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।

আর ওয়েলমার্ট লিমিটেড (টেক্সটাইল) চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী ওয়েল গ্রুপের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ গ্রুপের মালিকানায় আছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুচ ছালামের পরিবার। সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম ছালামের ছোট ভাই।

এইচএম শিপব্রেকিংয়ের এমডি সরোয়ার আলমের কাছে ৫৫ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও ইউসিবিএল’র সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি আসামিরা হলেন- ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক সৈয়দ কামরুজ্জামান, আরামিট গ্রুপের এজিএম আবদুল আজিজ, মিসবাহুল আলম, ইয়াছিনুর রহমান ও ইউসুফ চৌধুরী।

অন্যদিকে ওয়েলমার্ট লিমিটেডের এমডি সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলাসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।

বাকি তিনজন হলেন- ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক সৈয়দ কামরুজ্জামান, আরামিট গ্রুপের এজিএম আবদুল আজিজ ও ইয়াছিনুর রহমান।

উভয় মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২১ সালে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ভূমিমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুই শিল্পপতিকে ইউসিবিএল থেকে ৭৫ কোটি টাকা ঋণ নিতে বাধ্য করেন। পরে একইভাবে চাপ প্রয়োগ করে সমপরিমাণ টাকার চেক তাদের কাছ থেকে আদায় করেন।

এরপর চেকের মাধ্যমে কয়েক দফায় এ টাকা উত্তলোন করে নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর, ঋণের কিস্তি পরিশোধসহ প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে উত্তোলন করে বিদেশে পাচার করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ইউসিবিএল’র চেয়ারম্যান ছিলেন। মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করে স্ত্রী রুকমিলা জামানকে চেয়ারম্যান করেন।

তবে রুকমিলা নামেমাত্র চেয়ারম্যান হলেও দায়িত্ব ছিল মন্ত্রী জাবেদের কাছে। তিনি মন্ত্রী হয়েও নিয়মিত ইউসিবিএল কার্যালয়ে গিয়ে বসতেন ও ব্যাংকের কাজকর্ম করতেন। তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বোর্ড সভায়ও সভাপতিত্ব করতেন।