শিরোনাম
ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনা ভারত ও বাংলাদেশকে এক করে ফেলতে চেয়েছিলেন। সেই কারণেই তিনি বাংলাদেশিদের শুধু বাঙালি বলতেন।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাঙালি বাঙালি করতে করতে তার মুখে ঘাঁ করে ফেলেছেন। কিন্তু নানা ধরণের অপপ্রচার করেও তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে মুছে ফেলতে পারেননি।’
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘৭ নভেম্বর প্রজন্ম’ আয়োজিত ড. মারুফ মল্লিকের লেখা 'বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: নাগরিক ও জাতীয়তাবাদী জাতীয়তাবাদের সংকট' বইয়ের আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার প্রবণতা হচ্ছে জিয়াউর রহমানের করা সব কিছু মুছে দেওয়া। সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম, আস্থা, বিশ্বাস বাদ দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে জাতীয়তাবাদ মুছতে পারেননি। কারণ সেটা মুছতে গেলে বাংলাদেশের আইডেন্টিটি থাকবে না।
রিজভী বলেন, ‘আজ আমরা বিভাজনের নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যে রয়েছি। ৫ আগস্টের পরে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে হুমকি-হুংকার আসছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নতুন শক্তির উত্থান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য বড় ষড়যন্ত্র পাকিয়ে তোলার সুযোগ তৈরি করছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপিকে জড়িয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। অন্যরা অন্যায় করলেও প্রচার করা হচ্ছে বিএনপি করছে। বিএনপির নেতাকর্মী অন্যায় করলে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেই, বহিষ্কার করি, পদ স্থগিত করি, কিন্তু সেটি প্রচার করা হয় না। চতুরতার সঙ্গে বয়ান তৈরি করে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
রিজভী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপিকে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় হবে জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র, ছাত্রনেতার দায়িত্ব শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা, ফাইন আদায় করা নয়। আমিও রাকসুর ভিপি ছিলাম; দোকানদারি দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের, ছাত্রনেতার নয়। কিন্তু এরা রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র তৈরি করতে চাইছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের চেয়ে মহৎ কিছু নেই। এ জাতীয়তাবাদের শক্তিতেই দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। ১৫ বছরের আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।’
তিনি আহ্বান জানান, ৭ নভেম্বরের প্রজন্ম, জুলাই-আগস্টের প্রজন্ম—আসুন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সুন্দর দেশ গড়ি। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়; এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হই।’
মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ৭ নভেম্বর প্রজন্মের সদস্য সচিব ইয়াছির ওয়াদাদ তন্ময়।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ সংকট উত্তরণের একমাত্র দর্শন। এটি বিভেদ নয়, বরং ভূখণ্ড, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করে, বিদেশি প্রভাবমুক্ত স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ তৈরি করে। এর লক্ষ্য গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও জনগণের ক্ষমতায়ন। আজকের বাংলাদেশ অস্তিত্ব সংকটে; এই মুহূর্তে রাষ্ট্র ও সমাজের কেন্দ্রীয় দর্শন হিসেবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিম ভূঁইয়া। এ সময় বক্তব্য দেন ড. মারুফ মল্লিক, সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজি, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা বাবু ও মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক হারুন উর রশিদ।