বাসস
  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৫

নতুন বাংলাদেশ গড়তে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন জরুরি : আমীর খসরু

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা জরুরি। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল হতে হবে এবং জনগণের মতামতের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জনঅধিকার পার্টি আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ১ম বর্ষ যুগপৎ আন্দোলন শরিক দল’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি। 

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংস্কারের ক্ষেত্রে ভিন্নমত থাকবে, তবে যেসব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে উঠবে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। আর যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য থাকবে তা জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। জনগণের রায়ের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে।

আমীর খসরু ইতিহাসের উদাহরণ টেনে বলেন, যেসব দেশ বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে, তারা উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার পথে এগিয়েছে। অন্যদিকে যেসব দেশ এই প্রক্রিয়ায় দেরি করেছে, সেখানে সামাজিক দ্বন্দ্ব, বিভক্তি এমনকি গৃহযুদ্ধ দেখা দিয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘বিএনপি সবসময় গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার পক্ষে। আমরা আশা করি আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে এ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তার চর্চা ব্যাহত হয়। এজন্য ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গণতন্ত্রকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো অপরিহার্য।

শেখ হাসিনার শাসন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার মানসিকতা কিছু লোকের মধ্যে রয়ে গেছে। তারা সামান্য ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না। কিছু না হলেই মব তৈরি করে অন্যকে মানতে বাধ্য করছে। এটা গণতান্ত্রিক আচরণ নয়।

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি সবসময় গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার পক্ষে। আমরা আশা করি গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে, এর বাইরে কোনো সুযোগ নেই।’

বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিককে অর্থনীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশীদার হতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রত্যেক নাগরিককে অংশীদার করতে হবে। অর্থনীতি কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণির জন্য নয়, বরং সবার জন্য হওয়া উচিত। এজন্য নারী, গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, শিক্ষিত তরুণ এবং অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকদেরকেও কাজে লাগাতে হবে। 

তিনি বলেন, নাগরিকরা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলে তাদের আয় বাড়বে, জীবনমান উন্নত হবে এবং তারা নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান করবে। তখন জনগণ তাদের ট্যাক্সের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি তুলতে সক্ষম হবে। এভাবেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা পাবে।

আমীর খসরু বলেন, ২০২৪ সালের আন্দোলনের কৃতিত্ব কোনো একক রাজনৈতিক দলের নয়। বরং এটি পুরো দেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ফল। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, এখন সেটিকে প্রতিষ্ঠিত করা সবার দায়িত্ব।

আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন শরিক দলের নেতৃবৃন্দও বক্তব্য দেন। বক্তারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক ঐক্য, জাতীয় উন্নয়ন ও জনগণের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।