বাসস
  ০১ আগস্ট ২০২৫, ২০:৪৭
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৫, ২১:০৫

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আমরা দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছি : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ ও আহত যারা’ বইয়ের ইংরেজি ও আরবি ভার্সনের মোড়ক উন্মোচন। ছবি: বাসস

ঢাকা, ১ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ১৯৭১ সালে প্রথম স্বাধীনতা অর্জনের পরে আমরা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দ্বিতীয় বার স্বাধীন হয়েছি।

তিনি বলেন, মানুষের ওপর মানুষের গোলামি খতম করে আল্লাহর গোলামি কায়েম করার জন্য আমাদের আবার তৃতীয় বার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে হবে। 

মুজিবুর রহমান আরও বলেন, জাতীয় সংসদে আল্লাহর আইন পাশ করতে হবে। মানুষের রচিত কোন মতবাদ দিয়ে মানুষের মুক্তি আসবে না। এজন্য এ দেশে আল্লাহর আইন চালু করতে হবে।

আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ‘জুলাই’২৪ এর গণঅভ্যুত্থান: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা এবং ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ ও আহত যারা’ বইয়ের ইংরেজি ও আরবি ভার্সনের মোড়ক উন্মোচন এবং শহীদ স্মৃতি তথ্য সম্বলিত ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক জাতীয় সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এ কথা বলেন।

সেমিনারে ‘জুলাই’২৪ এর গণঅভ্যুত্থান: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সেমিনারে উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ, আহত জুলাই যোদ্ধা, জাতীয় নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক ও সাংবাদিকবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, উলামায়ে কেরামসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। 

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক নাসীরউদ্দিন পাটওয়ারী, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল ও জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি এড. জসিম উদ্দিন সরকার, গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, লে. কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এস. এম. ফরহাদ প্রমুখ। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাড. মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাড. মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মো. আব্দুর রব ও মোবারক হোসাইন, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, জাগপার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নির্বাহী সভাপতি এম. এ আজিজ হাওলাদার, সহসভাপতি জাফর ইকবাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক খান আসাদ, শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ, আহত জুলাই যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ।

সেমিনার যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরও বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যারা জীবন দান করে তারা শহীদ। আল্লাহ শহীদদেরকে বিরাট পুরস্কারে ভূষিত করবেন। গত বছর জুলাই-আগস্টে যারা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছে তারা সবাই শহীদ। শহীদ ও আহতদেরকে সর্বোত্তম পুরস্কার দেয়ার জন্য আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। 

তিনি বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মেনে চলতে হবে। তাহলেই আমরা দুনিয়া এবং আখিরাতে শান্তি, মুক্তি ও কল্যাণ লাভ করবো। 

আল্লাহর বিধান কায়েমের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, ১৯৭১ সালের পর স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে আওয়ামী লীগ জাতির উপর শোষণ, জুলুম, নির্যাতন, লুটপাট চালিয়েছে। লক্ষ লক্ষ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে। আবার ৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পরে আরেকটি দল ক্ষমতায় এসে লুটপাট, চাঁদাবাজি করেছে। কিন্তু জনগণের প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি। তাই এবার আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লুটপাট ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করি। ইসলাম কায়েম করা ছাড়া লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি বন্ধ হবে না। দেশে দুর্নীতিমুক্ত সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চালু করতে হবে। তা-না হলে ভোট ডাকাতি, কারচুপি, ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ হবে না। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক নাসীরউদ্দিন পাটওয়ারী শহীদদের তালিকা করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজিমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হলে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে মুসলমানদেরকে জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করে তাদের উপর জুলুম করা হয়েছে। জামায়াত-শিবির ও মসজিদের ইমামদেরকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। বর্তমানে একটি দলের মহাসচিব বলেছেন, দেশে দক্ষিণ পন্থার উদ্ভব হয়েছে।

 তিনি বলেন, দক্ষিণ পন্থার উদ্ভব হলে তাতে তাদের সমস্যা কি? দক্ষিণ পন্থার ভয় দেখিয়ে আবার জুলুম-নির্যাতন চালানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। 

এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াবার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। 

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু আজকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, জুলাই শহীদরা কোন দলের নয়। তারা গোটা জাতির গর্ব। কাজেই শহীদ পরিবারের লোকদেরকে চাকরি দেওয়া, আহতদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা সরকারের দায়িত্ব। 

তিনি বলেন, জুলাইয়ের গণহত্যা, বিডিআর সদর দপ্তরে সেনা অফিসারদের হত্যা, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করাসহ হাসিনার আমলে সংঘটিত সকল হত্যার বিচার করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের কোনো ক্ষমা নেই। 

অর্থসহ পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কুরআন তিলাওয়াতের পর নাতে রাসূল পেশ করা হয়। ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ ও আহত যারা’ বইয়ের তথ্য সংগ্রহের উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।