শিরোনাম
ঢাকা, ২ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. রফিকুল আবরারের নির্দেশনায় পাঠ্য বইয়ের ভুল-ত্রুটি সংশোধনে চার দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
রাজধানীর মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের আব্দুল জব্বার মিলনায়তনে কর্মশালা ৩০ জুন থেকে শুরু হয়েছে। কর্মশালাটি ৩ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
সারা দেশের মাধ্যমিক শ্রেণির স্কুলগুলোতে চলমান শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলগুলোর পাঠ্য বইয়ে ভুল-ত্রুটি সংশোধনের জন্য সারা দেশের ৪০ জনেরও বেশি অভিজ্ঞ শিক্ষক এ কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেছেন।
এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব), প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য মাধ্যমিক স্তরের ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণির পাঠ্য পুস্তকসমূহের পর্যালোচনা ও পরিমার্জন’ বিষয়ক একটি কর্মশালা ৩০ জুন থেকে শুরু হয়েছে এবং তা অব্যাহতভাবে ৩ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
তিনি বলেন, কর্মশালায় প্রাপ্ত ভুল-ত্রুটি সংশোধনপূর্বক বিশেষজ্ঞদের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন করা হবে।
এনসিটিবির কর্মশালা আগত সারা দেশের অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলীদেরকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে এনসিটিবি।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ক্ষুদ্র-জাতিসত্তা, জেন্ডার ও পেশাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বৈষম্যমূলক ও স্পর্শকাতর শব্দ, বাক্য, তথ্য বা ছবি আছে কি-না, তা যাচাই করে পরিমার্জনের জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রদান করতে হবে।
পাঠ্যপুস্তকে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা, দেশপ্রেম ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, কাঙ্ক্ষিত পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ বা জাতীয় চেতনা পরিপন্থী কিছু থাকলে, তা চিহ্নিত করে পরিমার্জনের জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রদান করতে হবে।
পাঠ্যপুস্তকে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও তথ্যসমূহ পর্যালোচনা করতে হবে এবং প্রযোজ্যক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য উৎস উল্লেখ করে তথ্যসমূহ হালনাগাদ ও সংশোধনের সুপারিশ করতে হবে।
বাংলা একাডেমি প্রণীত ‘বাংলা বানান অভিধান’ অনুসরণ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বানান সংশোধনীর প্রস্তাব প্রদান করতে হবে।
পাঠ্যপুস্তকের বিদ্যমান কাঠামো ও বিষয়বস্তু অপরিবর্তিত রেখে কেবল পাঠ্যপুস্তক নির্ভুলকরণে প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও পরিমার্জন প্রস্তাব প্রদান করতে হবে।
আজ মতিঝিলের এনসিটিবি কার্যালয় কর্মশালায় যোগদান কৃত কয়েকজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, তারা চান ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর বইগুলো যেন নির্ভুলভাবে প্রকাশ হয় এবং বইয়ের ওজন যেন কম হয়।
কারণ এত মোটা ভলিউমের বইয়ের কারণে সারা বছরেও ছাত্রছাত্রীরা বইয়ের সিলেবাস সম্পন্ন করতে পারে না। তাই বইগুলোর অনেক অধ্যায় ছাত্রদের পড়ার ও বোঝার বাইরে থেকে যায়।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের গণিতের শিক্ষক আব্দুল হক বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত বইয়ের পৃষ্ঠা ১৫৫টি। এ বইয়ে এত অধ্যায় না দিয়ে, অর্ধেক অধ্যায় দেওয়া যেতে পারে অথবা অধ্যায়গুলো ঠিক রেখে ছোট ছোট কনটেইন তৈরী করা যেতে পারে। এতে করে ছাত্ররা দ্রুততম সময়ে তাদের সিলেবাস সম্পূর্ণ করতে পারবে।
শিক্ষা উপদেষ্টার একান্ত সচিব এ কে এম তাজকির উজ জামান বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের হাতে যেন কোন প্রকারের ভুল বই না পৌঁছায়, সে জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয় এনসিটিবি’কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, চলমান চার দিনব্যাপী কর্মসূচির পরও যদি এনসিটিবি মনে করে যে, মন্ত্রণালয় থেকে তাদের আরো সহযোগিতা দরকার, তবে তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয় চান, কোনোভাবেই যেন কোন ভুল বই ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে না পৌঁছায়।
এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষার্থীদের নিকট মানসম্মত ও যথাসম্ভব নির্ভুল পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়ার জন্য এনসিটিবি বদ্ধপরিকর। পাঠ্যপুস্তকগুলো আরো মানসম্মত, যুগোপযোগী ও নির্ভুলভাবে প্রকাশের জন্য ইতোমধ্যেই নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের লক্ষ্যে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ বিষয় বিশেষজ্ঞ, মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ ও শ্রেণি শিক্ষকগণের সহায়তায় কর্মশালার মাধ্যমে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকসমূহ রিভিউ করে পরিমার্জনের সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। অতঃপর সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নির্বাচিত শ্রেণি শিক্ষক কর্তৃক ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির সকল পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করা হয় এবং নির্দিষ্ট ছকে তা অনলাইনে গ্রহণ করা হয়।
এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান আরো বলেন, এ ছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করা হয়। কর্মশালায় প্রদত্ত পরিমার্জন সুপারিশ, অনলাইনে শ্রেণি শিক্ষকগণের নিকট থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ, মাউশি ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত সকল সুপারিশ পর্যালোচনা করে, পাঠ্যপুস্তকের সফ্ট কপিতে সংযোজন করে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য খসড়া পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুত করা হয়।
চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির ২৯/৫/২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রস্তুতকৃত খসড়া পাঠ্য পুস্তকসমূহ উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপিত খসড়া পাঠ্যপুস্তকসমূহে কিছু ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে, উপদেষ্টা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অধিকতর পর্যালোচনা এবং ভুল সংশোধনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সে মোতাবেক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ এবং বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক খসড়া পাঠ্যপুস্তকসমূহ পুনরায় পর্যালোচনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের নিকট পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের জন্য, খুব শীঘ্রই মুদ্রণের জন্য প্রয়োজনীয় সফ্টকপি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানসমূহকে সরবরাহ করতে হবে। এজন্য পাঠ্যপুস্তকের বিদ্যমান কাঠামো ও বিষয়বস্তু অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র অতি প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও পরিমার্জন প্রস্তাব আহবান করা হচ্ছে।
কর্মশালার লক্ষ্য-
২০২৬ শিক্ষা শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রণীত খসড়া পাঠ্যপুস্তকসমূহ মানসম্মত ও অধিকতর নির্ভুলভাবে প্রণয়ন করা।
প্রদত্ত তথ্যসমূহ হালনাগাদকৃত কি-না, তা যাচাই করা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সংশোধনের সুপারিশ করা।
ভাষা, বাক্যগঠন ও বানান ইত্যাদি পর্যালোচনাপূর্বক সংশোধনের সুপারিশ করা।