বাসস
  ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৫৭

৯৫.৪ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৮৭.৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নত পানির উৎস রয়েছে : বিবিএস

ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): দেশের প্রায় ৯৫.৪ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৮৭.৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উন্নত পানির উৎসের সুবিধা রয়েছে।

তবে, ‘বেসিক ওয়াটার সার্ভিস’ বা মৌলিক পানি সেবার সংজ্ঞা অনুযায়ী-যেখানে উন্নত পানির উৎসটি প্রতিষ্ঠানের সীমানার ভেতরে থাকা আবশ্যক-সেই হিসেবে এই হার কিছুটা কমে যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ৮৬.১ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৭০.৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এই মানদণ্ড পূরণ করে।

আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত ‘ওয়াশ ইন এডুকেশন অ্যান্ড হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিজ সার্ভে ২০২৪’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি ফারুক আদ্রিয়ান দুমুন।

এসডিজি সেলের ফোকাল পয়েন্ট মো. আলমগীর হোসেন জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন এবং বিবিএস-এর জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য উইংয়ের পরিচালক মো. এমদাদুল হক স্বাগত বক্তব্য দেন।

বিবিএস জানায়, জরিপে দেশের আটটি বিভাগ ও ৬৪টি জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত ছিল।

জরিপে বলা হয়, ৯০.৬ শতাংশ স্কুল এবং ৯৮.৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তত একটি টয়লেট রয়েছে। তবে এগুলোর গুণমান, পর্যাপ্ততা এবং ব্যবহারের উপযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।

অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে হাত ধোয়ার জায়গা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে পানি ও সাবানের অভাব রয়েছে। 

ফলে মাত্র ৫১.৭ শতাংশ স্কুল এবং মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ‘বেসিক হ্যান্ডওয়াশিং’ সেবার মানদণ্ড পূরণ করতে পেরেছে।

মাত্র ২০.৭ শতাংশ বিদ্যালয়ে কিশোরী মেয়েদের জন্য আলাদা, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার রয়েছে এবং মাত্র ৬.৯ শতাংশ বিদ্যালয় মৌলিক মাসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। এসব ঘাটতি শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি, অস্বস্তি এবং শিক্ষায় লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যকে বাড়িয়ে তোলে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। ৭৮.৩ শতাংশ স্কুলে কঠিন বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা থাকলেও মাত্র ২৫.৪ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মৌলিক মানদণ্ড বজায় রাখা হয়। ৪১.৬ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা জায়গায় বর্জ্য পোড়ায়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

গত ১২ মাসে ২৪.০ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ১৯.৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা প্রায়ই পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামোর সরাসরি ক্ষতি করেছে।

জরিপে বলা হয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা এখনও সীমিত। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী পানির উৎস রয়েছে ৫৫.৪ শতাংশ স্কুলে এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই হার মাত্র ৪০.৯ শতাংশ।

প্রতিবেদনটি চরম আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরে। মাত্র ১১.১ শতাংশ স্কুল এবং ৩৪.৯ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘ওয়াশ’ খাতের জন্য নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ রয়েছে।

ফলাফলে দেখা যায়, মাত্র ২৮.৬ শতাংশ স্কুল আন্তর্জাতিকভাবে সুপারিশকৃত মান-প্রতি ৫০ শিক্ষার্থীর জন্য একটি উন্নত শৌচাগার-পূরণ করে।

বিবিএস সতর্ক করেছে যে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উন্নত পরিকল্পনা এবং জলবায়ু-সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ওয়াশ ব্যবস্থার ওপর জোর না দিলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে মৌলিক পানি ও স্যানিটেশন সেবা অপর্যাপ্ত থেকে যাবে। যা জনস্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।