শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ২৭ জুন, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডাক্তার শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম হচ্ছে সাম্যের শহর, সম্প্রীতির শহর। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে শহরের উন্নয়নে। এই ঐক্যই আমাদের শক্তি।’
প্রতিবছরের মতো এবারও আজ শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর তিনটি মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হয়। এগুলো হলো- প্রায় দু’শ বছরের পুরনো নন্দনকানন তুলসীধাম, নন্দনকানন শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির এবং প্রবর্তকের শ্রীকৃষ্ণ ইসকন মন্দির।
নগরীর তুলসীধাম থেকে বেলুন উড়িয়ে এবং রথের রশি টেনে শুভসূচনা করা হয় রথযাত্রার। রথে অধিষ্ঠিত হন ভগবান শ্রীজগন্নাথ, দেবী সুভদ্রা ও বলভদ্রদেব। এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন।
চসিক মেয়র বলেন, ‘আমি চাই রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে সবাই চট্টগ্রামের উন্নয়নে অবদান রাখুক। চট্টগ্রাম আমাদের সবার। পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত নগর গঠনে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় সংগঠন, এনজিও এবং সাধারণ মানুষকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান করোনা ভ্যারিয়েন্ট আগের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। ডেঙ্গু পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। তাই করোনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসম্পৃক্ততা এখন সবচেয়ে জরুরি। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে এবং নিজ-নিজ বাসাবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।’
রথযাত্রার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য তুলে ধরে তুলসীধামের মোহন্ত মহারাজ- শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজ বলেন, ‘রথের চাকা আমাদের জীবনে ভক্তির গতি এনে দেয়। এই রথ যেমন সম্মিলিতভাবে টানতে হয়, তেমনই জীবনের ভারও ভাগ করে নিতে হয় সবাইকে।’
তিনি বলেন, ‘জীবনের যাত্রা চলতে থাকবে বিশ্বাস আর সাহসে। গুরুই সেই ভরসা দেন, যা রথের মতো জীবনকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হয়। রথযাত্রা আমাদের শেখায়- অন্ধকার পেরিয়ে আলোয় ভরা জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে।’
অনুষ্ঠানে আশীর্বাদ দেন- শীতলপুর লোকনাথ সেবাশ্রমের অধ্যক্ষ গোবিন্দ ব্রহ্মচারী। স্বাগত বক্তব্য দেন- উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিধান ধর ও অর্থ সম্পাদক সুজিত হাজারী।
অ্যাডভোকেট সুজন কান্তি দে’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী, স্থপতি প্রণত মিত্র চৌধুরী, সৌরভ প্রিয় পাল, ডা. মনোজ চৌধুরী, কৃষ্ণ কর্মকার, রঞ্জন প্রসাদ দাশগুপ্ত, শান্তময় দাশ, সজল চৌধুরী, চন্দ্রনাথ পাল, ডা. বিবরণ দাশ, প্রদর্শন দেবনাথ ও অনুপম দেবনাথ পাভেল প্রমুখ।
এদিন রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে দিনব্যাপী চলে নামযজ্ঞ, মদনমোহন পূজা, জগন্নাথ-বলভদ্র-সুভদ্রার পূজা এবং মহাপ্রসাদ বিতরণ। তুলসীধামের মোহন্ত ও ঋষিধাম অধিপতি শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজের পৌরহিত্যে ধর্মীয় আচার সম্পন্ন হয়।
ঢোল, শঙ্খ, উলুধ্বনি আর ভক্তদের জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয় নগরী। শোভাযাত্রায় নগরের শ্রীকৃষ্ণায়ন রথ, গঙ্গাবাড়ি, পাথরঘাটা, শাহাজীপাড়া, টেকপাড়া ও টাইগারপাস এলাকার বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের রথও অংশ নেয়।
নগরের তুলসীধাম থেকে শুরু হয়ে নিউমার্কেট, লালদীঘি, আন্দরকিল্লা, চেরাগী পাহাড়, প্রেসক্লাব ও লাভলেইন হয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছায় রথযাত্রা। অনুষ্ঠানে অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।