শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, মৃত্যুকে আমাদের সব সময় স্মরণে রাখতে হবে। আমাদের মৃত্যুর সময় নির্দিষ্ট করা আছে, সেই সময়ই মৃত্যুবরণ করতে হবে। তাকিয়ে তাকিয়ে সেই সময় চলে আসবে। কখন আসবে সেটা বলা যায় না। মৃত্যু থেকে আমাদের শিক্ষা হলো প্রতিটি মুহূর্তে মৃত্যুর জন্য নেক আমল করে প্রস্তুত থাকা। হারাম খাবো না, কবিরা গুনাহ করবো না, কোনো ফরজ তরক করবো না, জেনা-ব্যভিচার করবো না, পাপাচার করবো না। সালাত ও পর্দাসহ পরিবারকে দ্বীনের উপরে রাখতে হবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে আল্লাহ তায়ালার দ্বীন মানা এবং কায়েমের জন্য জানমাল দিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সাবেক আমির দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিবের জানাজায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, আমরা মরহুম দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব ভাইয়ের জীবনে ইসলামী আন্দোলনের শিক্ষার বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাই। আমরা যা বলি, নিজের জীবনে তা খুব কমই প্রতিফলিত হয়। মরহুমের জীবনে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, সদাচার, বিনয়, ভদ্রতা, ধৈর্য ও মানুষকে আপন করে নেওয়ার ছিল অপূর্ব কৌশল।
তিনি বলেন, রাসূল (সা.) হাদীসে বলেছেন, হাশরের দিনে কারা ক্ষমা পাবেন তার মধ্যে এই গুণটা মৌলিক যারা বেশি সবর করতে পারে, মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করতে পারে। এর বিনিময়ে সে বড় আমলনামার ভাগীদার হবে।
তাঁর রচিত ‘একটুখানি মিষ্টি হাসি ও ইসলামী আন্দোলন’ বইটি আর দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম ভাইয়ের জীবনী এক। তিনি মানুষকে খুব আপন করে নিতেন। আমাদের মধ্যে এতো অসাধারণ গুণ ধরে রাখা কঠিন। কিন্তু মতলিব ভাই ছিলেন ব্যতিক্রম।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ইসলামী আন্দোলনের চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, অনেক ঝড়ঝাপটা, মামলা হামলার মধ্য দিয়ে কত যে মঞ্জিল পার করেছেন তিনি তার ইয়ত্তা নেই। তার দিকে তাকিয়ে এই অঞ্চলের মানুষ ইসলামী আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হয়েছে। অনেকেই বলেছেন আমরা অভিভাবককে হারিয়েছি। আমরা সবর করি। হায় আল্লাহ! এতো মানুষের সাক্ষী, এতো মানুষের সুধারণা যার প্রতি, তুমি তার প্রতি তোমার রহমত বর্ষণ করো।
তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো মানুষের মৃত্যু হয়ে যায় তখন তার কাছ থেকে আমলগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন তিনটি আমল থাকে, একটি হলো সদকায়ে জারিয়া, অন্যটি উপকারী শিক্ষা এবং অপরটি নেক সন্তান-সন্ততি।
জানাজা পূর্ব আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মো. সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমির মো. ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা আমির ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম ময়ূন, খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি মাওলানা ফখরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, হবিগঞ্জ জেলা আমির হাজী মাওলানা মোখলেসুর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান, সিলেট জেলা নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা আনোয়ার হোসেন খান, জেলা সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, সিলেট মহানগরী সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী, মৌলভীবাজার জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলী, ঢাকা পল্টন থানা আমির শাহীন আহমদ খান, হবিগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি কাজী মহসিন আহমদ, মাওলানা আহমদ বেলাল, আব্দুর রহিম রিপন ও মরহুমের বড় ছেলে দেওয়ান শরীফুজ্জামান চৌধুরী।
জানাজার নামাজে ইমামতি করেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সিলেট ইবনেসিনা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি ৬ ছেলে ৪ কন্যা সন্তানের জনক। স্ত্রী, সন্তান, নাতি-নাতনি সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তিনি দীর্ঘদিন মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সিলেট আঞ্চলিক বিভাগের টিম সদস্য ছিলেন।
তিনি ১৯৯১ সালে মৌলভীবাজার-৩ সংসদীয় আসন থেকে জামায়াতের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি ১৫টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার মধ্যে ইসলামী সংগঠন ও আমরা, সাতান্ন বছর জামায়াতে ইসলামীতে কি দেখলাম, শান্তিপূর্ণ পরিবার, মৃত্যুর পর আমরা কোথায় যাব, রাষ্ট্রপ্রধান হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, একটুখানি মিষ্টি হাসি ও ইসলামী আন্দোলন, একটুখানি চোখের পানি ও ইসলামী আন্দোলন, সর্বোত্তম জীবন, কারাগারের স্মৃতি, কাবার পথে অন্যতম।