শিরোনাম
হবিগঞ্জ, ১৫ জুন, ২০২৫ (বাসস): জেলায় বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে শহীদ ছাদিকুর মিয়ার (৪০) স্ত্রী-সন্তানদের ঠাঁই হয়নি নিজ ভিটায়। বাধ্য হয়েই সন্তানদের নিয়ে তার স্ত্রীকে থাকতে হচ্ছে বাপের বাড়িতে। স্ত্রী তার বাপের বাড়িতে থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে পড়েছে বিপাকে। তাদের ভরণপোষণের চিন্তায় এখন তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। স্বামীকে হারিয়ে বড় কষ্ট করে চলতে হচ্ছে জান্না বেগমকে। সন্তানদের লেখাপড়া নিয়েও রয়েছে তার শঙ্কা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে ৫ আগস্ট সকালে জেলার বানিয়াচং উপজেলায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাদিকুর মিয়া। তিনি উপজেলার পূর্বগড় গ্রামের ধলাই মিয়া ও হেলেনা বেগমের সন্তান। শহীদ ছাদিকুর মিয়ার রয়েছে একটি মাত্র ছোট বোন।
ছাদিকুর মিয়ার স্ত্রী জান্না বেগম জানান, গত ৫ আগস্ট বন্ধুদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন ছাদিকুর মিয়া। তিনি ইজিবাইক চালক ছিলেন।
জান্না বেগম অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারেন যে, হাসপাতালে ছাদিকুর মিয়ার লাশ পড়ে রয়েছে।
শহীদ ছাদিকুর মিয়ার রয়েছে দুটি সন্তান। ছেলে হাবিব মিয়ার বয়স ৫ আর কন্যা রাকিয়ার বয়স ২ বছর। ছেলে হাবিব জানে বাবা মারা গেছে কিন্তু কন্যা রাকিয়া এখনো জানেই না তার বাবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন।
মাঝেমধ্যে বাবাকে খুঁজে বেড়ায় মেয়ে রাকিয়া। বাবার বয়সী কাউকে দেখলেই বাবার ছবি দেখিয়ে কি জানি বলতে চায়।
জান্না বেগম বাসসকে জানান, ছাদিকুর মিয়া শহীদ হওয়ার পর বিএনপি ও জামায়াতের সাহায্য সহযোগিতা দেয়া হলেও তার ভাগ্যে তেমন কিছু জুটেনি। সহযোগিতার টাকা স্ত্রী-সন্তানদের হাতে না দিয়ে বাবা ধলাই মিয়ার হাতে দেয়া হয়। কিন্তু ধলাই মিয়া ছাদিকুরের স্ত্রী-সন্তানকে নামে মাত্র কিছু টাকা দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। জান্না বেগম দুই সন্তানকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন। সেখানেই তিনি কষ্টে জীবনযাপন করছেন।
স্বামী হত্যার বিচার প্রসঙ্গে জান্না বেগম বলেন, আমি চাই আমার স্বামী হত্যার বিচার। তবে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যারা প্রকৃতভাবে জড়িত তাদের বিচার হলে খুশি হবো।
ছাদিকুরের বাবা ধলাই মিয়া জানান, আমি অসুস্থ মানুষ। ছেলে শহীদ হওয়ার পর কিছু টাকা পেয়েছি, এখন সে টাকা দিয়ে নিজের চিকিৎসা করাচ্ছি। আমি অসুস্থ মানুষ। সহযোগিতার টাকা অর্ধেক তার সন্তানদের ও স্ত্রীকে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আফজল মিয়া জানান, শহীদ ছাদিকুর ছিল একজন ভাল মানুষ। আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি জনতার হয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। ঘটনার দিন তিনি তার ইজিবাইক দিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী লোকজনকে পরিবহন করেছেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস সে নিজেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
ছাদিকুর মিয়ার শ্বশুর আব্দুল কদ্দুছ জানান, আমার মেয়ের জামাই শহীদ হওয়ার পর থেকেই তার শ্বশুর তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। সে এখন আমার বাড়িতে দুই সন্তান নিয়ে বাস করছে। তার যাবতীয় দেখাশুনা আমিই করছি। আমার নাতি-নাতনিদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় আছি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি আমার কন্যাকে একটি চাকুরির ব্যবস্থা করে দিলে হয়তো সে তাদের সন্তানদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।