বাসস
  ১৫ জুন ২০২৫, ১৭:২৪

ঈদের ছুটির প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট

ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ১৫ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটির প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে আবারও কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। ছুটির সময় বন্দর সচল থাকলেও আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় কনটেইনার খালাসের গতি কমে যায়।

বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিক সময়ে দিনে গড়ে ৪ হাজারের বেশি কনটেইনার খালাস হয়। কিন্তু ছুটির সময় প্রতিদিন গড়ে মাত্র দেড় হাজার কনটেইনার খালাস হয়েছে। ফলে বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে ৪৫টি বিদেশগামী জাহাজ, এর মধ্যে ১২টি কনটেইনারবাহী।

রোববার (১৫ জুন) সর্বশেষ কনটেইনার রয়েছে ৪৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউ’স। বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার কমলেও বহির্নোঙরে ১২টি কনটেইনারবাহী জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে আছে প্রায় ১২হাজার কনটেইনার। পাশাপাশি বন্দর জেটিতেও ১১ জাহাজে কনটেইনার উঠানামা হচ্ছে। মূলত গত ১১ দিনে বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম চললেও বেসরকারি ১৯ ডিপো থেকে বেশি কনটেইনার আসায় নতুন করে জট তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি ১৯ ডিপো থেকে বেশি কনটেইনার বন্দরে আসলেও সে অনুপাতে কনটেইনার ডিপোতে না যাওয়াতে বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদুল আজহার ছুটির আগে ৪ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ছিল ৩৬ হাজার ২১৫ টিইইউস। এর মধ্যে ১১ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা কনটেইনার নেমেছে ৪২ হাজার ৭৯৫ টিইইউস এবং রপ্তানিপণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজীকরণ হয়েছে ৪২ হাজার ৪২ টিইইউস।

একই সময়ে বেসরকারি ডিপোগুলো থেকে রপ্তানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার আসে ১৫ হাজার ৯৪৮ টিইইউস আর খালি কনটেইনার আসে ৬ হাজার ৬২৫ টিইইউস। পাশাপাশি আমদানি পণ্যভর্তি ৯ হাজার ৮০২ টিইইউএস এবং খালি ৫ হাজার ২৮৩ টিইইউস কনটেইনার ডিপোগুলোতে পাঠানো হয়।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে ৮৮৮৮ টিইইউ’স কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙর মিলে পণ্য ও কনটেইনারবাহী ৯৮টি জাহাজ বর্তমানে অবস্থান করছে। এর মধ্যে ৫৫টি জাহাজ থেকে কনটেইনার ও বাল্ক পণ্য খালাস চলছিল। অন্যদিকে গত ৪ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে জেটি ও বহির্নোঙরে জাহাজ ছিল ১৪৭টি।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জাহাজ থেকে কনটেইনার বন্দরে নেমেছে ৫২০৬ টিইইউ’স, ঢাকা আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) থেকে এসেছে ১৮৬ টিইইউ’স। অফডকগুলো থেকে রপ্তানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার এসেছে ২৩২৪ টিইইউ’স এবং খালি কনটেইনার এসেছে ৮৩৭ টিইইউ’স।

একইভাবে ৩৬৮২ টিইইউ’স কনটেইনার জাহাজীকরণ হয়েছে। ৮৯ টিইইউ‘স কনটেইনার ঢাকা আইসিডিতে পাঠানো হয়েছে। অফডকগুলোতে আমদানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার পাঠানো হয়েছে ১২১১ টিইইউ’স। বন্দর থেকে ৯৯২ টিইইউ’স খালি কনটেইনার অফডকগুলোতে পাঠানো হয়েছে।

৪৩৭ টিইইউ’স আমদানিপণ্যবাহী কনটেইনার অনচেচিজ সরাসরি আমদানিকারকদের ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্দর অভ্যন্তর থেকে ৭৮৮ টিইইউ’স কনটেইনার পণ্য খালাস দেওয়া হয়েছে।

বন্দরে আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, শুরুতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলমবিরতির কারণে বন্দরে কনটেইনার জট তৈরি হয়। পরে গত ৫ জুন থেকে শুরু হয় কোরবানির ঈদের টানা আট দিনের সরকারি ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি দু-দিন।

এসময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সচল থাকলেও আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি, শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ বন্ধ থাকায় কনটেইনার খালাস কম হয়েছে।

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে সামনের কর্মদিবসগুলোতে সব স্টেকহোল্ডাররা কাজে ফিরলে সরবরাহ বাড়বে এবং বন্দরে জমে থাকা কন্টেইনারের পরিমাণ কমে আসবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় এবার ঈদের ছুটিকে সামনে রেখে আগেই বন্দরের ইয়ার্ড খালি করার চেষ্টা ছিল। বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে সভা করে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সেকারণে এবারের ঈদের বন্ধে অন্যবারের তুলনায় ভালো অবস্থায় ছিল বলে জানান তিনি।