শিরোনাম
ঢাকা, ২৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘মেজর সিনহার মৃত্যু গোটা দেশের মানুষকে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে যে, আমাদের বুকের ওপর তা পাহাড়ের মত ভারী হয়ে আছে।’
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষে তিনি আদালতে এ কথা বলেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এই হত্যা মামলায় রায়ের জন্য আগামী ২ জুন দিন ধার্য করেন।
আজ শুনানিতে রাষ্ট্র পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এই মামলার সকল সাক্ষী, স্বীকারোক্তি প্রদানকারীসহ সবাই বলেছে মেজর সিনহা গাড়ি থেকে নিরস্ত্র অবস্থায় নেমে দুই হাত উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন।
তারপর তাঁকে গুলি করা হয়। প্রথমে দুইটা, পরে আরও দুইটা। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পা দিয়ে গলায় পায়ের চাপ দেয়া হয়। ফলে আসামীরা প্রাইভেট ডিফেন্স হিসেবে যে অ্যালিবাই নিয়েছেন, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। তাছাড়া অ্যালিবাই প্রমাণ করার জন্য কোনো সাক্ষী, কোনো সারকামস্টেনশিয়াল অ্যাভিডেন্স (পরিস্থিতিগত প্রমাণ), কোনো মৌখিক, দালিলিক কোনো কিছুই আনেননি। ফলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তারা (আসামীরা) মেজর সিনহাকে হত্যা করেছে।'
অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে আরও বলেন, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য (সারকামস্টেনশিয়াল অ্যাভিডেন্স) বলছে যে, সকল সাক্ষীর জবানবন্দি আনবিটেবল। কোলাবরেটিভ অ্যাভিডেন্স বলছে, মেজর সিনহাকে কী উদ্দেশ্যে খুন করেছে, কে কিভাবে এই খুনে অংশ নিয়েছে, সেটি রাষ্ট্রপক্ষ সন্দোতীতভাবে প্রমাণ করেছে। আর এটা বলতে গিয়ে আদালতকে বলেছি, কোনো কোনো মৃত্যু পাখির পালকের মত হালকা, কোনো কোনো মৃত্যু পাহাড়ের মত ভারী। মেজর সিনহার মৃত্যু গোটা দেশের মানুষকে, গোটা দেশকে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে যে, আমাদের বুকের ওপর পাহাড়ের মতো ভারী হয়ে আছে। আমরা যদি এর বিচার করে যেতে না পারি, তাহলে কবি হেলাল হাফিজের ভাষায় উত্তর পুরুষের কাছে ভীরু কাপুরুষের উপমা হয়ে থাকবে। তাই নিম্ন আদালতের রায়টিই আমরা বহাল চেয়েছি।'
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি মো. জেনারেল জসিম সরকার, মো. আসাদ উদ্দিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. গিয়াসউদ্দিন গাজি, লাবনি আক্তার, তানভীর প্রধান ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ ও আসাদুল্লাহ আল গালিব।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।