বাসস
  ২৯ মে ২০২৫, ১৭:৫১

ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সকলের দায়িত্বশীল সহযোগিতা কামনা প্রসিকিউশনের

ঢাকা, ২৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইনের অপব্যাখ্যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অসত্য যে কোনো বক্তব্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতকে ব্যাহত করে উল্লেখ করে এরূপ কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানিয়ে তা থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রসিকিউশন।

আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সম্পর্কে আক্রমণাত্মক, অসত্য ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি আপিল বিভাগে এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলা শুনানি করার ক্ষেত্রে “কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট” (স্বার্থের সংঘাত) নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, যা বাস্তবতা বিবর্জিত, অসত্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আইনের অপব্যাখ্যার শামিল। একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের সদস্যদের সম্পর্কে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও বিদ্বেষমূলক কিছু বক্তব্য দৃশ্যমান হয়েছে যা শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং মানহানিকর।’

এ প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের বক্তব্য তুলে ধরা হলো, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অতীতে ট্রাইব্যুনালে এটিএম আজহারুল ইসলামের ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছিলেন, বিধায় এই মামলার প্রথম দিনই আপিল বিভাগে বিষয়টি মেনশন করে শুনানিতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। এরপর এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে অংশগ্রহণ করেন এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক এবং প্রসিকিউশনের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, ব্যারিস্টার শাইখ মাহদী এবং মো. মামুনুর রশীদ, যাদের কেউই ইতিপূর্বে এটিএম আজহারুল ইসলামের পক্ষে কোনো প্রকার মামলা পরিচালনা করেননি। শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ (অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস) এবং ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন আপিল বিভাগে তাদের বক্তব্য ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন। এর পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রযোজ্যতা সম্পর্কে ডিফেন্স কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্যের বিরোধিতা করে প্রসিকিউশন যুক্তি উত্থাপন করেন। প্রসিকিউশন কর্তৃক বিচার চলাকালীন সময়ে ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত বক্তব্য কিংবা উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ সম্পর্কে আপিল বিভাগ প্রদত্ত সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে, এই মর্মে আপিল বিভাগে প্রসিকিউশন বক্তব্য রাখেন। সুনির্দিষ্ট কোনো মামলায় একজন ব্যক্তি দুইটি বিবদমান পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। কিন্তু একই ধরনের অপরাধে, বা একই দলের বা গোষ্ঠীর কোনো ব্যক্তির পক্ষে ডিফেন্স করেছেন বলে একজন আইনজীবী সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনো ব্যক্তির প্রসিকিউশন করতে পারবেন না, এমন কোনো আইনগত বাঁধানিষেধ পৃথিবীর কোথাও নেই। প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর বর্তমান প্রসিকিউটর করিম খান বর্তমান দায়িত্বে আসার আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট চার্লস টেইলর, কেনিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো, লিবিয়ার গাদ্দাফির পুত্র সাইফ গাদ্দাফিসহ বহু অভিযুক্তের ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে খোদ আইসিসি-তেই কাজ করেছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সর্বজনশ্রদ্ধেয় মরহুম সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ১৯৭৩ সালে দালাল আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য গঠিত আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ব্যক্তিদের ডিফেন্সের প্রধান আইনজীবী হিসেবে তিনি প্রশ্নাতীত সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন।’

প্রসিকিউটর কার্যালয়ের বক্তব্যে আরো বলা হয়, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অফিস এবং তদন্ত সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইনের অপব্যাখ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা অসত্য যে কোন বক্তব্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতের উদ্যোগকে ব্যাহত করবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা ও সহযোগিতা কাম্য।’