বাসস
  ২৮ মে ২০২৫, ২৩:৩২

ঈদযাত্রায় ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে যাত্রী হয়রানি ও কালোবাজারির অভিযোগে দুদকের অভিযান

ছবি: দুদক ফেসবুক পেজ

ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস): ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে যাত্রী হয়রানি ও কালোবাজারির অভিযোগে ঢাকাসহ দেশের ৮টি বড় রেলওয়ে স্টেশনে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট থেকে আজ একযোগে দেশের ৮টি রেলওয়ে স্টেশনে এসব অভিযান চালানো হয়। 

দুদক জানায়, ইতঃপূর্বে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বিক্রয়কারী অনলাইন প্লাটফর্ম সহজ ডট কম কর্তৃক ঈদ যাত্রার ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে বিক্রয় করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি এনফোর্সমেন্ট টিম সহজ ডট কম -এর প্রধান কার্যালয়ে মঙ্গলবার অপরাহ্ণে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়।

সহজ ডট কম-এ পরিচালিত অভিযানে দুপুর ২টায় ঢাকা-সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস (৭০৯) ট্রেন-এর ৬ জুনের টিকিট অনলাইনে বিক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রম সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে সহজ ডট কম -এর রেল সংশ্লিষ্ট এডমিন সার্ভার পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ভিআইপি কোটার জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক সিট সিস্টেমে ইমারজেন্সি কোটা (ইকিউ) করে ব্লক করে রাখা হয়। নির্ধারিত সময়ে ট্রেনের টিকিট উন্মুক্ত হওয়ার সময় ভিআইপি কোটার বাইরেও অনুরোধের টিকিটগুলো কম্পিউটার সিস্টেমে ব্লক করে রাখার সুযোগ রয়েছে বলে অভিযানকালে এনফোর্সমেন্ট টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। 

এ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বা অনিয়ম নির্ণয়ের লক্ষ্যে অনলাইনে ৬ জুনের যাত্রার তারিখের টিকিট বিক্রয় সংক্রান্ত সার্ভার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সার্ভার রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে টিম কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।

রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীসেবা প্রদানে হয়রানি এবং ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রেক্ষিতে আজ দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযান চালায়। অভিযানকালে স্টেশনে অবস্থানরত যাত্রী ও অন্যান্যদের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রামাগারের অপ্রতুলতা, অপরিচ্ছন্নতা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া স্টেশনে অবস্থানরত ও যাত্রারত যাত্রীদের জন্য খাবার পানি সরবরাহের কলগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে ইজারা পদ্ধতিতে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে যেখানে অতিরিক্ত মূল্য প্রদান করতে হয় বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। অনবোর্ড ট্রেন (বনলতা এক্সপ্রেস)- এর যাত্রীসেবা ও অন্যান্য সুবিধাদি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ট্রেনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এটেন্ডেটের অনুপস্থিতি রয়েছে এবং বরাদ্দকৃত টয়লেট টিস্যু ও সাবান প্রদান করা হয়নি। এছাড়া খাবার গাড়ি পরিদর্শনে খাবার মান অনুযায়ী মূল্য অযৌক্তিক ও মাত্রাতিরিক্ত বলে টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়। এছাড়াও অভিযানকালে রেলওয়ে ডিজেল ওয়ার্কশপে বাজারমূল্যের থেকে অতিরিক্ত মূল্যে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। 

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের সেবা প্রদানে হয়রানি এবং টিকিট কালোবাজারীসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়। অভিযানকারী টিমের সদস্যরা প্রথমে পরিচয় গোপন করে গ্রাহক সেজে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টার, দায়িত্বরত আরএনবি -এর সদস্য, আশে-পাশের দোকান এবং বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে টিকিট পাওয়া নিয়ে কথা বলে। প্রাথমিক পর্যালোচনায় ঈদযাত্রায় সম্পূর্ণ অনলাইনে বিক্রিত টিকিট কালোবাজারে পাওয়া যাচ্ছে বলে টিম তথ্য-প্রমাণ পায়। 

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে দুদক আরেকটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়। অভিযানে দেখা যায়, আন্তঃনগর ট্রেনসমূহে যাত্রীসেবার জন্য নির্ধারিত ১৮ প্রকার সামগ্রীর মধ্যে শুধু এসি বগিতে সীমিত পরিসরে সাবান ও টিস্যু সরবরাহ করা হয়। অথচ এসব সামগ্রীর নামে মাসে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলে অভিযানকারী টিমের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। অনবোর্ড যাত্রীসেবার জন্য আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান ‘প্রগতি এন্টারপ্রাইজ’-এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত এ্যাটেডেন্টদের নির্ধারিত ১৬ হাজার টাকা বেতন না দিয়ে বরং তাদের কাছ থেকে মাসে কয়েক হাজার টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযানকালে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এছাড়া স্টেশনের পুরাতন প্লাটফর্ম ভেঙে পাওয়া সাড়ে তিন টন রড এক লাখ সতেরো হাজার টাকায় বিক্রি করে সরকারি তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযানকালে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। একইসাথে এক ও দুই নম্বর প্লাটফর্মে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের, রেল স্টাফ কোয়ার্টার বহিরাগতদের ভাড়া দেয়া এবং রেললাইন থেকে পাথর লোডে পরিমাপ না করার অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। 

রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কালোবাজারিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে এনফোর্সমেন্ট টিম ছদ্মবেশে রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে অবস্থান নিয়ে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে। এ সময় স্টেশন এলাকায় অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্নতাসহ ৪ টি ওয়েটিং রুমের মধ্যে ৩টি ওয়েটিং রুম তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। ওয়েটিংরুম খুলে রাখার ব্যবস্থা করা, বাথরুমসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য স্টেশন মাস্টারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে এ ধরনের আরেকটি অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান পরিচালনাকালে এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যরা ছদ্মবেশে টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করলে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে টিকিট বিক্রয়ের সত্যতা পায়। প্রাথমিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে স্টেশনে দায়িত্বরত আরএনবির সদস্যরা বুকিং সহকারীদের সাথে যোগসাজশ করে টিকিট কালোবাজারির কাজগুলো করে। এছাড়া দুদক টিম ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে যাত্রীদেরকে টিকিট ছাড়াই বগিতে অবস্থান করার সুযোগ দেওয়াসহ নানাবিধ অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়। 

এদিকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনেও দুদক অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের প্রাক্কালে ময়মনসিংহ রেল স্টেশনে ছদ্মবেশে পর্যবেক্ষণ করা হয়। রেলওয়ে বুকিং সহকারী দুইজনের কাছে বিধি বহির্ভূতভাবে টিকিট পাওয়া যায়, যাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এছাড়া বেসরকারিভাবে পরিচালিত কমিউটার ট্রেনে টিকেটের টাকার অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় বলে আগত যাত্রীদের কাছ থেকে তথ্য পায় দুদক টিম। স্টেশনে আগত যাত্রীদের জন্য ১ম শ্রেণির বিশ্রামাগার এবং স্টেশন অপরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়। 

এছাড়াও অনুরূপ অভিযোগে দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং জামালপুর সদর রেল স্টেশনে অভিযান পরিচালনা করে অভিযোগসমূহের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।