বাসস
  ২৮ মে ২০২৫, ২০:২৬
আপডেট : ২৮ মে ২০২৫, ২০:৩১

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগীদের অব্যাহত সহায়তা প্রয়োজন

ছবি : পিকেএসএফ

ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস): জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগীদের অব্যাহত সহায়তা প্রয়োজন।

রাজধানীতে পিকেএসএফ ভবনে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) কর্তৃক বাস্তবায়িত জার্মান সরকারের অর্থায়নে ‘ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর সাসটেইনেবল কমিউনিটি লাইফ ইন দ্য হাওর রিজিয়ন অফ বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তন, উদ্ভূত বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, তাপ প্রবাহ ইত্যাদির ফলে গড়ে ১ থেকে ২ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায়। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। তবে, কার্যকরভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি এবং এ লক্ষ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের অব্যাহত সহায়তা প্রয়োজন ।

পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো.শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ অনুবিভাগ) ড. ফাহমিদা খানম, এবং জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অফ ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন উলরিখ ক্লেপমান।

অনুষ্ঠানে  স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের। 

পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি ছাদেক আহমাদ এবং মহাব্যবস্থাপক ড. একেএম নুরুজ্জামান অনুষ্ঠানে দুটি প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন। 

বাংলাদেশ সরকার গৃহীত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিভিন্ন কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে ৮০০টিরও অধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সরকার বাৎসরিক বাজেটের ৬ থেকে ৭শতাংশ অর্থ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যয় করে। দেশের দু’টি জাতীয় প্রতিষ্ঠান পিকেএসএফ ও ইডকল গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) হতে এ পর্যন্ত ৯টি প্রকল্প ও ৮টি সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প বাবদ ৪৪৭.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছে। ‘মরু-হাওর’ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত কার্যক্রমসমূহকে আরো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে পিকেএসএফ নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সভাপতির  বক্তব্যে জাকির আহমেদ খান বলেন, সর্বোচ্চ সততা, স্বচ্ছতা, নিষ্ঠা ও নিশ্ছিদ্র পরিবীক্ষণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে পিকেএসএফ তার সকল কার্যক্রমের গুণগত মান ও কার্যকারিতা শতভাগ নিশ্চিত করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতে পিকেএসএফ নিরলস কাজ করে যাবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড উলরিখ ক্লেপমান বলেন, বর্তমানে জার্মান সরকার বাংলাদেশে ৫৩টি চলমান প্রকল্পে সহযোগিতা দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সরকারের একার পক্ষে মোকাবেলা করা সহজ নয় উল্লেখ করে ড. ফাহমিদা খানম বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিওসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলেই কেবল এটি সম্ভব হবে’।
মো. ফজলুল কাদের বলেন, পিকেএসএফ, জিসিএফ ও অ্যাডাপ্টেশন ফান্ডের ডিরেক্ট অ্যাকসেস এনটিটি হিসেবে বাংলাদেশে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা মোকাবিলায় কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম টেকসই কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে’।

জার্মান সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়িত ‘মরু-হাওর’ প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জ জেলার হাওর এলাকায় তিনটি ইউনিয়নে তীব্র ও আকস্মিক বন্যার ঢেউয়ের ফলে সৃষ্ট ভাঙন থেকে বাড়িঘর রক্ষা এবং হাটিতে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সিসি ব্লক রিভেটমেন্ট ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়। এর ফলে, প্রায় সাড়ে সাত হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি আকস্মিক বন্যার ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে, কমিউনিটি স্পেস উঁচু করার ফলে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হয়েছেন এবং নির্মিত দেয়ালের পাশে বৃক্ষ রোপণের ফলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হয়েছে। এছাড়া, জামালগঞ্জ এবং দিরাই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ১.৫৪ কি.মি. দীর্ঘ সুরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।