শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র বিদায়ী কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন দেশে ও বিদেশে আরও উন্নত বেতনের বিশেষায়িত চাকরির জন্য শ্রম শক্তিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে দক্ষতা উন্নয়ন সংস্কারের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী চাকরির সংকোচন একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য। যেখানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দশ লাখেরও বেশি কর্মী বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছে।’
টুমো আরও বলেন, ডব্লিউইএসও রিপোর্টে বাংলাদেশের, বিশেষ করে নারী ও যুব সমাজের জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ তৈরির প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা না করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল চাকরির মতো উচ্চ দক্ষ পেশায় আরও বেশি চাকরির প্রত্যাশা রয়েছে।
বিদায়ী কান্ট্রি ডিরেক্টর আজ আইএলও-এর নতুন ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক (ডব্লিউইএসও) আপডেটের জন্য জারি করা এক প্রেস বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
আইএলও ২০২৫ সালের জন্য তাদের বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে, যেখানে পূর্বের আনুমানিক ৬ কোটির পরিবর্তে ৫ কোটি ৩০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এই বছর বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৫ শতাংশে হ্রাস পাবে।
এই পতন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অবনতিকে প্রতিফলিত করে। এটি প্রায় সাত মিলিয়ন অতিরিক্ত কর্মসংস্থান কমানোর সমতুল্য।
আইএলও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ৭১টি দেশে প্রায় ৮৪ মিলিয়ন কর্মসংস্থান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মার্কিন ভোক্তা চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কিত। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে এই কর্মসংস্থান ও তাদের দ্বারা পরিচালিত আয় এখন ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
আইএলও’র মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ. হাউংবো বলেন, ‘আমরা জানি যে, বিশ্ব অর্থনীতি আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও ধীর গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের প্রতিবেদন এখন আমাদের বলছে যে, যদি চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য বিঘ্ন অব্যাহত থাকে এবং আমরা যদি কর্মক্ষেত্রকে পুনর্গঠিত না করি, তাহলে বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটা পরিবর্তন আনতে পারি। আমরা তা করতে পারি সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করে, দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করে, সামাজিক সংলাপ প্রচার করে ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন সকলের জন্য উপকারী নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রম বাজার তৈরি করে।’
প্রতিবেদনে আয় বণ্টনের উদ্বেগজনক প্রবণতাও তুলে ধরা হয়েছে। শ্রম আয়ের অংশ- বিশ্বব্যাপী ২০১৪ সালে ৫৩ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আফ্রিকা ও আমেরিকা সবচেয়ে বেশি পতনের সম্মুখীন হয়েছে।
প্রতিবেদনটি উচ্চ-দক্ষ চাকরির দিকে কর্মসংস্থানের পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে। নারীরা এই প্রবণতার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে, উচ্চ-দক্ষ পেশায় নিযুক্ত নারীর অংশ ২১ দশমিক ২ থেকে বেড়ে ২৩ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে- যেখানে ২০২৩ সালে উচ্চ-দক্ষ পেশায় পুরুষের অনুপাত ছিল প্রায় ১৮ শতাংশ। তবুও নির্মাণের মতো খাতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব কম, সেই তুলনায় যত্নশীল ভূমিকায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব বেশি।
প্রতিবেদনে কর্মক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির প্রভাব নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে যে, এআই প্রায় চারজন কর্মীর মধ্যে একজনের স্থান দখল করতে পারে ।
মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই প্রতিবেদনের ফলাফল অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
তিনি আশার আলো দেখিয়ে এও বলেন, ‘তবে এগুলো উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য একটি রোডম্যাপ হিসেবেও কাজ করতে পারে। আমরা একটি পরিবর্তন আনতে পারি এবং আমরা সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করে, দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করে, সামাজিক সংলাপ প্রচার করে ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রম বাজার তৈরি করে তা করতে পারি- যাতে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনকে সকলের জন্য উপকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। আমাদের তা গুরুত্ব, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও সংহতির সঙ্গে করতে হবে।’