শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস পাওয়া এটিএম আজহারুল ইসলামকে সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
আজ বুধবার তিনি বাংলাদেশ মেডিকেলের (পিজি হাসপাতাল) প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শাহবাগে তাকে সংবর্ধনা দেয় জামায়াতে ইসলামী।কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ও ঢাকা মহানগরীর সাবেক আমীর এ টি এম আজহার বলেছেন, ‘আজ আল্লাহর রহমতে আমিরে জামায়াতের কাছ থেকে ফুলের মালা পাচ্ছি। গলায় রশি ঝুলানোর পরিবর্তে ফুলের মালা পাচ্ছি। আজীবন যেন আমি ইসলামী আন্দোলনের জন্য শহীদ হতে পারি, সেই তৌফিক আল্লাহর কাছে চাই।’
সংবর্ধনার জবাবে আজহারুল বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি প্রায় ১৪ বছর কারাগারে থাকার পর আজ সকালে মুক্ত হলাম। আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। স্বাধীন দেশে আমি একজন স্বাধীন নাগরিক।’ এর জন্য তিনি প্রথমে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এরপর আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। এতদিন ন্যায় বিচার ছিলো না, আদালতকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে আদালত জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন।’
নিজের মামলায় নিয়োগকৃত আইনজীবীদেরও ধন্যবাদ জানান এটিএম আজহার।
আজহার বলেন, আরও ধন্যবাদ জানাতে চাই, যাদের কারণে আজকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, সেই ৩৬ জুলাই অর্থাৎ ৫ আগস্টের মহাবিপ্লবী নায়কদের। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে। আমি ধন্যবাদ জানাব এক্ষেত্রে ছাত্রসমাজকে, যারা তাদের অতীতের গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। সেনাবাহিনীকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মাওলানা আব্দুল কাদের মোল্লা ও মীর কাশেম আলীকে ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ করা হয়েছে বলে দাবি করেন এ টি এম আজহার। তিনি বলেন, ‘যারাই এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যেখানে যে পর্যায়ে জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করা হোক। তা না হলে এই খারাপ সংস্কৃতি চালু থাকবে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সম্মানিত এই ভাইয়ের (আজহারুল) বক্তব্য অচিরেই আমরা আরও বড় পরিসরে শুনব, ইনশাল্লাহ। এই ঢাকাতেই শুনব, ইনশাআল্লাহ। আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে, মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে যাকে সুদীর্ঘ ১৪টি বছর ধরে জুলুম করা হয়েছে আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। মহান রব তাকে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন।’
জামায়াত আমির বলেন, দেশের ১৮ কোটি মজলুম মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জালিম সরকারের পতন হয়েছে। আমরা এর মূল কৃতিত্ব আল্লাহ তাআলাকে দিই আর জমিনে এই কৃতিত্ব এ দেশের জনগণকে দেওয়ার পক্ষে। জাতির প্রয়োজনে আমরা একপথে হাটবো এবং সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। দলের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ ও মাওলানা আবদুল হালিম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল ও সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, মহানগরী উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন ও সেক্রেটারি রেজাউল করিম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মুফতি সুলতান মহীউদ্দিন ও মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইউসুফ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, প্রয়াত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র মাসুদ সাঈদী, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র নাজিবুর রহমান মোমেন, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পুত্র আলী আহমাদ মাবরুর, কারামুক্ত এ টি এম আজহারুল ইসলামের পুত্র তাসনিম আজহার সুমন, আব্দুল কাদের মোল্লার পুত্র হাসান জামিল প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পাওয়ার প্রেক্ষিতে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম আজ সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন। এ সময় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। এটিএম আজহার কারা হেফাজতে এখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এর আগে গতকাল আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশে তাকে অবিলম্বে জেল হেফাজত থেকে মুক্তি দিতে বলা হয়েছিল।
প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির সাক্ষরের পর তিন পাতার সংক্ষিপ্ত আদেশ গতকালই প্রকাশিত হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, অন্য কোন মামলা বা আইনি কার্যক্রমের কারণে আটক রাখার প্রয়োজন না হলে, তাকে অবিলম্বে জেল হেফাজত থেকে মুক্তি দিতে বলা হয়।'
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল মঞ্জুর করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের রায় বাতিল করে গতকাল রায় ঘোষণা করেন। ফলে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পান এটিএম আজহারুল ইসলাম। মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে কোনো আসামি আপিল বিভাগের রায়ে এই প্রথম খালাস পেলেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের রায় রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আবেদন করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ ছিলো। রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতেই রাষ্ট্রযন্ত্র ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে ওই বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে দাবী ছিল অনেকের। সে সময় বিচারপতির স্কাইপি কেলেংকারী, আসামি পক্ষের সাক্ষী গুমের ঘটনা বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উঠা প্রশ্নকে আরো প্রাসঙ্গিক করে তুলে।