বাসস
  ২৪ মে ২০২৫, ১৫:১১
আপডেট : ২৪ মে ২০২৫, ১৬:৪৫

আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব: ডা. শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান শনিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতের ষান্মাসিক কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। ছবি: বাসস

ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশ এখন এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। এ পরিস্থিতি সফলভাবে অতিক্রম করতেই হবে। 

তিনি বলেন, ‘আমরা বিচলিত নই, কিন্তু দেশের বাস্তবতা বহু মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’

শনিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতের ষান্মাসিক কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সর্বদলীয় আলোচনা আহ্বানের বিষয়ে সরকারকে জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আলোচনাই পারে সংকটের সমাধান করতে। এ দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।’

ডা. শফিক বলেন, ‘জামায়াত ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। আমাদের রাজনীতি দেশ ও জনগণের কল্যাণে পরিচালিত হয়।’

তিনি দ্রুত একটি সংস্কার ও নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে বলেন, আজ নয় মাস হয়ে গেল পরিবর্তনের ঘোষণা এসেছে, অথচ এখনো জনগণের সামনে কিছুই আসেনি।

তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। ‘আমরা তাঁর কথায় আস্থা রেখেছি। তিনি আমাদের প্রতিপক্ষ নন। সরকার যেহেতু সবার, তাই আমরা তাকে সহযোগিতা করতে চাই। যদি কোনো ফাঁক তৈরি হয়, এ দায় কেউ এড়াতে পারবে না।’

অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম। উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ডা. হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন।

ডা. শফিক বলেন, ১৯৭১ সালের পর অনেক কিছু অর্জিত হওয়ার কথা থাকলেও মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বড় অংশ আজও অপূর্ণ। ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নির্মম ও নজিরবিহীন। এতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা অতীতে কোনো আন্দোলনে হয়নি।

তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার দেশকে দিয়েছে দুঃশাসনের স্টিম রোলার। মানুষের ১৫ বছর কেটেছে দুঃস্বপ্নের মধ্যে। জাতীয় নেতৃবৃন্দকে বিচার ছাড়াই, আবার কাউকে বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। আয়না ঘরে আটক করে নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ইতোমধ্যে এসব ঘটনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। কিন্তু এখনো জনগণ কোনো বিশ্বাসযোগ্য বিচার দেখতে পাচ্ছে না।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি ন্যায়বিচার না হয়, বাংলাদেশ অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। আবার যেনতেন বিচারও চাই না। বিচারের নামে আমাদের ওপর যেভাবে অবিচার হয়েছে, তাও চাচ্ছি না।’

নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘পরপর তিনটি নির্বাচনে জনগণের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। একদিকে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে ভোটের প্রতি জনগণের অনীহা তৈরি করা হয়েছে।’

মানবিক করিডোর ইস্যুতে তিনি বলেন, এটা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। উপদেষ্টা পরিষদ মন্ত্রীসভার সমতুল্য হলেও সংসদ তো নেই। তাই এ সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। আবার বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়াও সমীচীন হবে না।

সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ফসল। কোনোভাবেই তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করা উচিত নয়। কেউ যেন সেনাবাহিনী নিয়ে অপ্রীতিকর মন্তব্য না করে, এটাও আমাদের প্রত্যাশা।’

আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিন ও গাজায় দশকের পর দশক ধরে নির্যাতন চলছে। যুদ্ধবিরতি নয়, আমরা যুদ্ধ বন্ধ চাই। সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে, সেখানে বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সমস্যার মানবিক সমাধান জরুরি এবং নিরাপদে তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে।’

শেষে শুরা সদস্যদের উদ্দেশ্যে জামায়াতের আমির বলেন, ‘প্রত্যেকে সতর্ক থাকুন। যেন কেউ অন্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, আরও ত্যাগের মনোভাব নিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য কাজ করুন।’