বাসস
  ২২ মে ২০২৫, ২০:৫৯

নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার : ড. খন্দকার মোশাররফ 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজ বৃহস্পতিবার গুলশান বিএনপির চেয়ারপারর্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির আলোচনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তগুলো জানায়। ছবি : বাসস

ঢাকা, ২২ মে, ২০২৫(বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘জুলাই-ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথা শীঘ্র সম্ভব জন-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’

তিনি বলেন, ‘জন-আকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া বর্তমান সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপি’র পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশান বিএনপির চেয়ারপারর্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির আলোচনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তগুলো জানাতে গিয়ে ড. মোশাররফ এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবী জানাচ্ছি।

এসময় গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে ড. মোশাররফ বলেন, ‘যে বিষয়গুলো এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সে বিষয়গুলো আমাদের আগের প্রস্তাব ও পরামর্শের মত উপেক্ষিত হলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক এবং সেক্ষেত্রে অনিবার্যভাবেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে কিনা তা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।’ 

ড. মোশারফ বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি এই ঐক্যকে বজায় রেখে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কোন বিকল্প নেই। এই ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখতে হবে। অথচ আমরা বারবার উচ্চারণ করেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।’

অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এ কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘অথচ সরকারের মুখপাত্র হিসাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন যে, এই সরকারের সবকিছু করার ম্যান্ডেট রয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক।’ 

ড. মোশাররফ বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘ মেয়াদী নীতি নির্ধারণী কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন অস্থায়ী সরকারের আছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে, এ কারণে দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে যাতে দেশে অস্থিতিশীল কোন পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন তিনি। 

নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি বিব্রতকর উল্লেখ করে খন্দকার মোশারফ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘সংস্কার সনদ’ তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যেই আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও একই বিষয়গুলো নিয়ে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে একটি দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি আমাদেরকে এবং সরকারকে বিব্রত করে।” 

তিনি বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও একটি মহল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন চায়। সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সব ক্ষেত্রে আমাদের মতামত না নিলেও নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সকল পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে এই কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন করায় নির্বাচন কমিশনকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। 

ড. মোশাররফ আরও বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করেছে সুতরাং আমাদেরকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা আশা করব নির্বাচনী ট্রাইবুনাল এবং উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে অতিশীঘ্রই সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র হিসাবে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নেবে।’

ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচার কার্য চলমান থাকবে জানিয়ে খন্দকার মোশারফ আরও বলেন, ‘যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দু’টোই একই সাথে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল এবং মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাউদ্দিন আহমেদ।