বাসস
  ২১ মে ২০২৫, ১৪:৪৬

রাজধানীতে ফটোগ্রাফারকে খুন করে ক্যামেরা ছিনতাই : ১০ জন গ্রেফতার

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২১ মে, ২০২৫ (বাসস) : রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া এলাকায় ফটোগ্রাফার নূরুল ইসলামকে খুন করে ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি’র হাজারীবাগ থানা পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয় ।

এতে বলা হয়, মঙ্গলবার ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ছিনতাইকৃত দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি, একটি রামদা ও একটি বড় ছোরা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে-মো. নাঈম আহম্মেদ (২০), মো. শাহীন অকন্দ ওরফে শাহিনুল (২০), মো. শাহীন চৌকিদার (২২), মো. রহিম সরকার (১৯), মো. নয়ন আহম্মেদ (১৯), হৃদয় মাদবর (১৮), মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজা (১৯), মো. আনোয়ার হোসেন (১৯), মো. শহিদুল ইসলাম (২০) ও  মো. আরমান (১৮)।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয় , মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম (২৬) পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। তিনি বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি তোলার কাজ করতেন।  গত ১৫ মে  অজ্ঞাত একটি মোবাইল নম্বর থেকে নুরুল ইসলামের মোবাইলে কল আসে। অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি বিয়ের ইভেন্টে ছবি তোলার জন্য তাকে বুকিং দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে ৫০০ টাকা অগ্রিম পাঠায়। 

পরের দিন ১৬ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে একই নম্বর থেকে ফোন করে শংকর চৌরাস্তায় অপেক্ষা করার কথা জানানো হয়। 

নূরুল ইসলাম তার সহযোগী মো. ইমন ওরফে নূরে আলমসহ মতিঝিলের এজিবি কলোনীর বাসা থেকে বের হয়ে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে। সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি শংকর বাসস্ট্যান্ডে তাদের সঙ্গে দেখা করে। তারা ওই ব্যক্তির কথা মতো একটি অটোরিকশাযোগে জাফরাবাদ পুলপার ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা করে। রাত ৮টার দিকে জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া এলাকায় পৌঁছামাত্র অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা তাদের রিকশার গতিরোধ করে। ঘটনার আকস্মিকতায় ইমন রিকশা থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায়, কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা নুরুল ইসলামকে ধরে ফেলে। তারা ধারালো চাপাতি দিয়ে নুরুল ইসলামের মাথা, ঘাড়, বাহু ও হাতের আঙ্গুলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তার কাছে থাকা দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এ সময় নুরুল ইসলামের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায় । এরপর ভিকটিম নূরুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পথচারীরা। 

সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নূরুল ইসলামের বড় ভাই মো. ওসমান গণি বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এতে বলা হয়,  মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়। 

এরপর মঙ্গলবার ধারাবাহিক সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ঢাকার শংকর ও রায়েরবাজার এবং ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া ও তারাকান্দা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেফতারকৃতরা  সবাই  ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী। তারা টিকটকে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তৈরি করে পোস্ট করতো। উন্নতমানের ও আকর্ষণীয় ছবি ও ভিডিও করার জন্য ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিনতাইয়ের  পরিকল্পনা করে তারা। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী খেলার মাঠে ফুটবল খেলার পর, নাঈম আহম্মেদের নেতৃত্বে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। 

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নাম করে ফটোগ্রাফারদের কাছ থেকে কৌশলে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গ্রেফতারকৃত নাঈম শংকর বাসস্ট্যান্ডে নূরুল ইসলাম ও তার সহযোগী ইমনের সঙ্গে দেখা করে। নাঈম তাদেরকে একটি অটোরিকশাযোগে জাফরাবাদ পুলপার ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা বলে নিয়ে যায়। রাত ৮টার দিকে জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া ‘ক্ষণিকালয়’ নামক বাসার গেইটের সামনে অটোরিকশাটি পৌঁছলে গ্রেফতারকৃত নাঈম, শাহীন, শাহীনুল, রহিম, নয়ন, রিদয়, রাজ্জাক, আনোয়ার, শহিদুল ও আরমান অটোরিকশার গতিরোধ করে নূর ইসলামের কাছ থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। ক্যামেরা না দিতে চাইলে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নূরুল ইসলামের শরীরে এলোপাতাড়ি আঘাত করে এবং ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি ।