বাসস
  ২০ মে ২০২৫, ১৫:৩৬

সফল নারী উদ্যোক্তা রহিমার জীবনের গল্প

রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা করে রহিমা বেগম একজন সফল উদ্যোক্তা । ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২০ মে, ২০২৫ (বাসস) : রাজধানী ঢাকার সাভারে অভিজাত রেস্টুরেন্ট তন্দুরী নাইটসের এমডি রহিমা বেগম কখনো ভাবেননি তিনি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় নামবেন। ইডেন কলেজ থেকে ভূগোল বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে রহিমা বেগম সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। স্বামী মামুন লন্ডনের ‘রয়্যাল সোসাইটি অব দ্য প্রমোশন অব হেলথ, লন্ডন, ইউকে’ থেকে ফুড অ্যান্ড হাইজিন কোর্সে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ভাবলেন, নিজেই এ ব্যবসা করবেন এবং ব্যবসা করলে দেশে গিয়েই করবেন। যে কথা সেই কাজ। তিনি দেশে এসে সাভারের থানা রোডে এনাম মেডিক্যাল কলেজের মাঝে লন্ডনাস নামের রেস্টুরেন্ট চালু করেন। স্বামীর ব্যবসায় সার্বিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন রহিমা বেগম।
  
রেস্টুরেন্ট কর্মচারীদের খাবার রান্নাবান্না করা থেকে আনুষঙ্গিক সব সহযোগিতায় খুব অল্প সময়ে স্বামীর ইউরোপ স্ট্যান্ডার্ড রেস্টুরেন্ট লন্ডনাস দাঁড়িয়ে যায়। সেই থেকে তারও মনে রেন্টুরেন্ট ব্যবসার জন্য এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা জাগে। স্বামীর সহযোগিতায় এনাম মেডিকেল কলেজের পাশেই অবস্থিত বিসমিল্লাহ টাওয়ারে তন্দুরী নাইটস নামে একটি আধুনিক, পরিচ্ছন্ন রেস্টুরেন্ট খুলে ব্যবসা শুরু করেন। 

আপনি কেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বেছে নিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আভিজাত্য প্রকাশ পায় তার খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্য তালিকায়। মুখরোচকতার সঙ্গে খাদ্যের খাদ্যমান ও তা স্বাস্থ্যসম্মত কি না, আধুনিক সমাজে তা প্রবলভাবে বিবেচিত। এ বিষয়গুলোকে সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে বিবেচনা করে তন্দুরী নাইটসের যাত্রা শুরু। তাছাড়া বলতে পারেন, স্বামীকে সহযোগীতা করতে গিয়ে, ভালোলাগা থেকে এ ব্যবসায় সম্পৃক্ত হওয়া। এখন মনে হয়, এটি আমার আনন্দের অন্যতম মাধ্যম।

শুধু তা-ই নয়, পরিবারের সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে খাওয়াও একটা বিনোদন এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নিবিড় ও অন্তরঙ্গ বন্ধন আরো সুদৃঢ় করে- এ সত্য উপলব্ধি করে শুরুতেই চালু করা হয় পরিবারবান্ধব প্যাকেজ। সেই প্রতিষ্ঠালগ্নের অর্থাৎ ২০১৭ সালের ৯০ টাকার প্যাকেট আট বছরে মাত্র ৩০ টাকা বেড়ে বর্তমানে এর দাম হয়েছে ১২০ টাকা। 

তন্দুরী নাইটসের সফলতা হচ্ছে, পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাঝেমধ্যে রেস্টুরেন্টে ফ্যামিলি পার্টিতে যাওয়ার আগ্রহ গড়ে তোলা। তার এ কথার যথার্থ প্রমাণ হচ্ছে থানা রোডের মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে উঠছে এ জাতীয় প্রায় ৩০টি রেস্টুরেন্ট। যেখানে ২০১৭ সালে লন্ডনাস ব্যতীত ভালোমানের কোন খাবার হোটেলই ছিল না। 

যেহেতু স্বামী মামুন লন্ডনের ‘রয়্যাল সোসাইটি অব দ্য প্রমোশন অব হেলথ, লন্ডন, ইউকে’ থেকে ফুড অ্যান্ড হাইজিন কোর্সে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করে শেকড়ের টানে দেশে চলে এলেন এবং এসে অনেক ভাল বেতনের চাকরির অফার ফিরিয়ে দিয়ে শুরু করেন, ‘লন্ডনাস থাই অ্যান্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্ট’ ব্যবসা। তাই স্বামীকে সহায়তা করতে গিয়ে তিনি সে সময় ভাবলেন, নিজেই এ ব্যবসা করবেন এবং শুরু করলেন। মামুনের কথায় অতি অল্প সময়ে কঠোর শ্রম ও চেষ্টায় আশ্চর্যজনক সাড়া পাই। এ বিষয়টিও রহিমা বেগমকে এ ব্যবসায় উৎসাহী করে তোলে। এখন সাভারে ২০০ মিটারের ব্যবধানে তাদের দুটি প্রতিষ্ঠান। থানা রোডে বিসমিল্লাহ টাওয়ারের দোতলায় রয়েছে তন্দুরী নাইটস।

রহিমা বেগমের সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে, এ ব্যবসার মাধ্যমে তার পুরো পরিবারকে একটা বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারা। তার পরিবারের সবাই এখন এ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় সম্পৃক্ত। অর্থনৈতিক সচ্ছলতার সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যবসা সবার কর্মসংস্থানেরও অন্যতম আধার। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, তার এ প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন ও ডেকোরেশন। ২০১৭ সালের স্বাধীনতা দিবসে এর যেমন যাত্রা শুরু, তেমনি ভেতরের ডেকোরেশনে  রয়েছে লাল-সবুজের প্রতি ভালোবাসা, যা তাদের প্রগাঢ় দেশপ্রেমেরই বহি:প্রকাশ।

রহিমা বেগমের মতে, খাদ্য হচ্ছে মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম। এর সঙ্গে জড়িত মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিতৃপ্তির বিষয়। সুতরাং এর পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যগত দিকগুলো দেখা জরুরি। আর এ ব্যবসায় যারা রয়েছেন তাদেরকেই এগুলো নিশ্চিত করতে হবে এবং তা তাদের কর্তব্য। 

তিনি জানান, ‘তন্দুরী নাইটস’ রেস্টেুরেন্টের শুরুতে তিনি মাত্র তিনজন ওয়েটার দিয়ে কাজ করাতেন। তাই নিজ হাতে বাথরুম, ফ্লোর পরিস্কারসহ প্রায় সব কাজই করতেন। নিজে সকাল ৬টায় রেস্টেুরেন্ট খুলতেন এবং রাত ১২টায় বন্ধ করতেন। 

আজ সেই প্রতিষ্ঠানেই কাজ করছে ১৫ জন কর্মচারী। ‘তন্দুরী নাইটস’ রেস্টুরেন্ট এখন সাভারে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার আইকন। এ রেস্টুরেন্টে কোনো একক ব্যক্তি, পুরো পরিবার বা বন্ধুবান্ধব মিলে খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন। এখানে প্রায় ১০০ গেস্টের সংকুলানে পার্টির ব্যবস্থাও করা যায়। তবে এক্ষেত্রে আগে বুকিং দিতে হয়। 

পারিবারিক জীবনে এক কন্যাসন্তানের জননী রহিমা বেগম এখন সাভারের অনেকের কাছেই কর্মোদ্দীপনার মডেল। রহিমা বেগমের মতো নারী উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসায় এগিয়ে এলেই দেশে নারীর ক্ষমতায়নের কাজটি আরো ত্বরান্তিত হবে।