শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : অবৈধ পন্থায় শুল্কমুক্তভাবে কার্নেট সুবিধা সংবলিত গাড়ি এনে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে আজ এই এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানকালে দেখা যায়, এইউডিআই, বিএমডব্লিউ, ল্যান্ড রোভার, ভলভো, টয়োটাসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি সরকারি রাস্তার পাশে লাল কাপড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই গাড়িগুলো মাল্টিব্র্যান্ড ওয়ার্কশপ লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ফেলে রেখেছে। এনফোর্সমেন্ট টিম গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর সংগ্রহ করে এবং উক্ত ওয়ার্কশপের ডেটাবেজ যাচাই করে গাড়িগুলো মাল্টিব্র্যান্ড ওয়ার্কশপের কাস্টমারের কিনা, কখন, কী কারণে ওয়ার্কশপে আনা হয়েছে, গাড়িগুলো কে নিয়ে এসেছে ও প্রকৃত মালিক কে, গাড়িগুলো এখনও ওয়ার্কশপে কেন পড়ে আছে ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করে।
এছাড়া, গাড়িগুলো কার্নেট সুবিধার আওতায় শুল্কমুক্তভাবে দেশে আনা হয়েছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। একইসঙ্গে গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশন ও মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য বিআরটিএ থেকে সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, গাড়িগুলো কয়েক মাস থেকে শুরু করে এক বছর পর্যন্ত সময় ধরে এভাবে সরকারি জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে, যা সন্দেহজনক। এ সংক্রান্ত সকল রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত রিপোর্ট দাখিল করবে।
এদিকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে একই কোম্পানিকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার কাজ দেওয়া এবং প্রকল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎসহ নানাবিধ অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন অপর একটি এনফোর্সমেন্ট টিম ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান পরিচালনাকালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন হতে অভিযোগ সংক্রান্ত নথিপত্র চাওয়া হয়
এ ছাড়া ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা প্রদানে অনিয়মসহ নানাবিধ অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। টিম ছদ্মবেশে এই হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন রোগীর ল্যাব টেস্ট এর ফি আদায়ের রসিদ সংগ্রহ করে দেখা যায় যে, টাকা আদায়ের রশিদে আদায়কারীর স্বাক্ষর নেই। ল্যাব টেকনিশিয়ান রোগীদের থেকে ৪ থেকে ৫ টি টেস্টের টাকা আদায় করলেও ১টি অথবা ২টি টেস্টের টাকা সরকারি খাতে জমা দিয়ে বাকী টাকা আত্মসাৎ করছেন মর্মে টিম প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পায়। রোগীদের সরবরাহকৃত রান্না করা মাংসের ওজন নির্ধারিত ৯০ গ্রামের স্থলে ৪০-৫০ গ্রাম পাওয়া যায়। এমনকি আগের দিনের রান্না করা তরকারি রোগীদের সরবরাহের প্রমাণ পায় দুদক টিম।
প্রাপ্ত এ অনিয়মসমূহের বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে এনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও হাসপাতালের ওষুধ মজুদের তালিকা জনসমক্ষে প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অভিযানকালে তা পাওয়া যায়নি। এম্বুলেন্স দিয়ে রোগী পরিবহণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করারও প্রাথমিক প্রমাণ পায় এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযানে প্রাপ্ত তথ্যাবলির আলোকে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়ে কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
গোপালগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে অনিয়মসহ নানাবিধ অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের গোপালগঞ্জ থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইন্সট্রাক্টরদের প্রশিক্ষণ উপকরণ সরবরাহের রেজিস্ট্রার ২০১৯ সালের ১ অক্টোবরের পর থেকে আর হালনাগাদ করা হয়নি, যা দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত দেয়।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ স্লিপ সামগ্রী যথাযথভাবে বিতরণ না করা এবং তা নথিভুক্ত না রাখার প্রমাণ অভিযানকালে পাওয়া গেছে। এছাড়াও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইউপিএস ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়নীতি লঙ্ঘনের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়।