বাসস
  ১৫ মে ২০২৫, ১৫:৩৯

রমনা পার্কে বিরল প্রজাতির বাওবাব গাছ: প্রকৃতিপ্রেমীদের বিস্ময়

রমনা পার্কে বিরল প্রজাতির বাওবাব গাছ: প্রকৃতিপ্রেমীদের বিস্ময়। ছবি : বাসস

প্রতিবেদন : মাহামুদুর রহমান নাযীদ

ঢাকা, ১৪ মে, ২০২৫, (বাসস) : ঢাকা শহরের ফুসফুস রমনা পার্ক। শত শত বৃক্ষ, খোলা আকাশ, আর সজীব বাতাসের মিশেলে এটি যেন নাগরিক জীবনের কোলাহল থেকে মুক্তির এক টুকরো স্বর্গ। ভোরবেলা হাঁটাহাঁটি, সন্ধ্যাবেলা বিশ্রাম কিংবা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় জমান এই সবুজ উদ্যানে।

ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রমনা পার্ক শুধুমাত্র একটি প্রাচীন উদ্যান নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত উদ্ভিদ সংগ্রহশালা। এই পার্কে রয়েছে কনকচাঁপা, কুরসি, এসকালেট, ভাদ্রা, যাকান্ধা, নাগেশ্বর, পারিজাতসহ নানা দেশি-বিদেশি গাছ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কেড়েছে এক বিরল প্রজাতির গাছ - বাওবাব (Baobab), যার বৈজ্ঞানিক নাম Adansonia digitata।

উইকিপিডিয়া মতে, বাওবাব গাছ আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল, মাদাগাস্কার এবং অস্ট্রেলিয়ার নির্দিষ্ট অঞ্চলসমূহে জন্মে থাকে। এই গাছ Bombacaceae পরিবারভুক্ত এবং প্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশে জন্মায় না। তাই রমনা পার্কে এই গাছের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

গাছটির মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর গঠন । মাটি থেকে বিশাল আকারের কাণ্ড লম্বা হয়ে সোজা উপরের দিকে উঠে গেছে। একেবারে মাথায় ঝোপঝাড়ের ডালপালা ছড়ানো আছে। দেখে মনে হয় ছাতার মতো। শীতকালে পাতা ঝরে যায় তখন একে অনেকটা মরা গাছের মতো দেখায়। গ্রীষ্মের শেষে নতুন পাতা জন্মায়। এই গাছ উচ্চতায় প্রায় ৭৫ ফুট লম্বা হয়।

মরু অঞ্চলের গাছ বলে খুব কম পানিতেই এর প্রয়োজন মিটে যায়। বাওবাব গাছটি কয়েক হাজার বছর বেঁচে থাকে। গাছটি প্রথম দেখাতেই বিস্ময় জাগায় কারণ তার মোটা কাণ্ড, অদ্ভুত গঠন এবং শুষ্ক মৌসুমে পাতা ঝরিয়ে ফেলা স্বভাব একে অন্যান্য গাছ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে তোলে। অনেকেই একে ‘উল্টো গাছ’ (upside-down tree)  বলে ডেকে থাকেন কারণ শীতকালে পাতাহীন কাণ্ডকে দূর থেকে শিকড়সহ উল্টো গাছের মতোই দেখায়।

ঔষধি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর বাওবাব গাছ। বাওবাব গাছের ফলকে সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ফল শুকিয়ে গুঁড়া করে তা পানীয় বা বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবারে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া গাছের পাতা ও বাকলও প্রাচীন আফ্রিকান ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই গাছের আঁশ দিয়ে তৈরি করা যায় টেকসই দড়ি ও কাপড়।

রমনা পার্কের নিয়মিত ব্যায়াম করেন শাহাদাত হোসেন অনু, তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই এখানে হাঁটতে আসি। গাছপালা তো অনেক দেখেছি, কিন্তু এই বাওবাব গাছটা একদম আলাদা। প্রথমে বুঝতেই পারিনি এটা কী গাছ। পরে পরিচিতি সাইনবোর্ড  দেখে বুঝতে পারি এটি আফ্রিকার বিখ্যাত গাছ । ভাবতেই ভালো লাগছে, আমাদের ঢাকায় এমন একটা গাছ আছে। এরকম গাছ আমাদের বাচ্চাদের শেখানোর জন্যও দারুণ একটি উৎস হতে পারে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার আহম্মেদ বলেন, ‘বাওবাব গাছ আমাদের দেশে একেবারেই বিরল। এটি শুধু চোখে দেখার জন্য নয়, গবেষণার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রজাতি। গাছটি যেমন দীর্ঘজীবী, তেমনি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে এর কাণ্ডে পানি সংরক্ষণের ক্ষমতা এবং রাতের বেলা ফুল ফোটার পর বাদুড় দ্বারা পরাগায়ণের প্রক্রিয়া একে প্রকৃতির এক অদ্ভুত বিস্ময়ে পরিণত করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের বৈশ্বিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রজাতি আমাদের উদ্ভিদবৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে। রমনা পার্কে এই গাছটির উপস্থিতি আমাদের জন্য একটি ‘বোটানিক্যাল হেরিটেজ’ হয়ে উঠতে পারে, যদি আমরা তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও পরিচর্যা করি।’