বাসস
  ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৩৫

কুমিল্লায় আলুর ব্যাপক ফলন, দামে হতাশ চাষিরা

কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পাড়ের উর্বর জমিতে আগাম আলু চাষে এবার ব্যাপক ফলন হয়েছে। ছবি: বাসস

\ কামরুল হাসান \

কুমিল্লা, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস) : জেলার গোমতী নদীর পাড়ের উর্বর জমিতে আগাম আলু চাষে এবার ব্যাপক ফলন হয়েছে। মাঠজুড়ে সবুজ গাছ আর মাটির নিচে পরিপাটি ও বড় আকারের আলু দেখে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও, ন্যায্য দাম না পাওয়ায় সেই হাসি এখন দুশ্চিন্তায় রূপ নিচ্ছে।

সরেজমিনে গোমতী পাড় ঘুরে দেখা যায়, কয়েকশ একর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। প্রতিটি জমিতেই ফলন ভালো, আলুর আকার ও মানও সন্তোষজনক। বাজারে তুলনামূলক চাহিদা বেশি থাকায় পাইকাররা সরাসরি জমি থেকেই আলু সংগ্রহ করছেন। তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম কম হওয়ায় লাভ তো দূরের কথা, খরচ উঠবে কিনা তা নিয়েই সংশয়ে কৃষকেরা।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কুমিল্লা জেলায় আলু চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ হেক্টর কম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে দাউদকান্দি উপজেলায় ৩ হাজার ৯৯৮ হেক্টর এবং দেবিদ্বার উপজেলায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়া বুড়িচং উপজেলার গোমতী পাড় এলাকায় আলু চাষ হয়েছে প্রায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে।

কৃষকদের অভিযোগ, এ বছর বীজের দাম বেশি ছিল। পাশাপাশি সার ও কীটনাশকের উচ্চমূল্যের কারণে উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় সরকারি সহায়তা ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, গত বছর ন্যায্য দাম না পাওয়ায় এ বছর আলু চাষ কিছুটা কমেছে। তবে পূর্বের মজুত থাকায় কুমিল্লায় আলুর কোনো ঘাটতি হবে না। বর্তমানে কৃষকরা জমি থেকে প্রতি কেজি আলু পাইকারি দামে পাচ্ছেন প্রায় ১৮ টাকা কেজি দরে। পরিবহন ও আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করে খুচরা বাজারে তা ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও কুমিল্লার চাহিদা মিটিয়ে এই আলু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলার বাইরে থেকেও পাইকাররা এসে প্রচুর পরিমাণে আলু নিয়ে যাচ্ছেন।

আদর্শ সদর উপজেলার গোমতী চরে প্রায় ৪০০ শতক জমিতে আলু চাষ  করেছেন কৃষক রুবেল মিয়া। তিনি বলেন, আমি ও আমার ভাইয়েরা মিলে চার একরের বেশি জমিতে আলু চাষ করেছি। আশা ছিল এবার ভালো দাম পাবো। কিন্তু যে দাম পাচ্ছি, তাতে খরচ উঠবে কিনা সন্দেহ। আর একটু দাম বাড়লে আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়তো।

আলু কিনতে আসা পাইকার আরিফুল ইসলাম জানান, আমরা জমি থেকে কেজি প্রতি ১৮ টাকায় আলু কিনি। পরিবহনসহ কেজিতে ২-৩ টাকা খরচ পড়ে। বিক্রি না হলে আলু পচে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাই বাজারে ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়।

কৃষক সারোয়ার হোসেন বলেন, গোমতী নদীর চরের ৮০ শতক জমিতে আলু চাষ করেছি। এবার ফলন ভালো হলেও দাম খুব কম। গত বছর এই সময়ে ৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করেছি, এবার পাচ্ছি মাত্র ১৮ টাকা। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় আলু চাষ কমে যাচ্ছে। সামনে আলুর দাম আরও কমবে।

২০০ শতক জমিতে আলু চাষ করেছেন কৃষক সুজন। তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ার অপেক্ষায় আছি। এত কম দামে আলু ছাড়তে মন চায় না। কিছুদিন অপেক্ষা করবো, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’

সব মিলিয়ে, ব্যাপক ফলনের আনন্দ থাকলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ার হতাশ কুমিল্লার আলু চাষিরা। কৃষকরা দ্রুত সরকারি হস্তক্ষেপ ও ন্যায্য বাজার ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।