শিরোনাম

খুলনা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : চলতি রবি মৌসুমে খুলনা বিভাগের চারটি জেলায় মোট ৩৮ হাজার ২৫১ হেক্টর জমি থেকে ৫৪ হাজার ৩৬৯ টন সরিষা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) খুলনা কৃষি অঞ্চলের চার জেলায় এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বর্তমানে সরিষা ক্ষেতগুলো হলুদাভ রঙ ধারণ করতে শুরু করেছে, যা মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করেছে। রবি মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং অনুকূল আবহাওয়া সরিষা গাছের ভালো বৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে, যা বাম্পার ফলনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে এ মৌসুমে ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকরাও লবণাক্ত-প্রবণ জমিতে সরিষা চাষ করেছেন এবং পুরো অঞ্চলে ফসল ভালোই বেড়ে উঠছে।
তিনি বলেন, অনুকূল আবহাওয়া, উচ্চফলনশীল জাত, আধুনিক প্রযুক্তি এবং সরকারি উদ্যোগের ফলে এ মৌসুমে জমির পরিমাণের তুলনায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এবং বিভিন্ন এনজিওসহ অন্যান্য গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোও এ মৌসুমে নির্ধারিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার মেচোঘোনা গ্রামের কৃষক মশিউর রহমান (৩৫) এ মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। গত বছর তিনি চার বিঘা জমি থেকে ১৯ মণ সরিষা পেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, সহজ চাষাবাদ পদ্ধতি এবং অন্যান্য রবি শস্যের তুলনায় কম উৎপাদন ব্যয়— এসব কারণে উপকূলীয় অঞ্চলসহ পুরো এলাকায় সরিষা চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
গোলনা গ্রামের আরেক কৃষক শহীদ হোসেন (৪৪) এ মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। গত বছর তিনি পাঁচ বিঘা জমি থেকে ২৩ মণ সরিষা পেয়েছিলেন।
দুর্গাপুর উপজেলার নন্দীগ্রাম গ্রামের হাসিবুর রহমান (৪৫) বলেন, তিনি গত বছর দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে প্রতি বিঘায় ছয় মণ করে ফলন পেয়েছিলেন। এ মৌসুমে তিনি তিন বিঘা জমিতে এ লাভজনক ফসল চাষ করেছেন এবং ভালো ফলনের আশা করছেন।
বালিয়াখালী গ্রামের আরেক কৃষক মাহতাব উদ্দিন (৪৩) গত কয়েক বছর ধরে এ লাভজনক ফসল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ বছর তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, সরকার কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ও গবেষকরা কৃষকদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, কাঙ্ক্ষিত ফলন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগকে সম্পূরক করতে পেতে কৃষকরা উচ্চফলনশীল সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।
তিনি আরো বলেন, সরিষা একটি পানি-সাশ্রয়ী ফসল এবং উপকূলীয় অঞ্চলে এর চাষবাদ সম্প্রসারণ ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বটিয়াঘাটা উপজেলার কাটিয়ানাংলা গ্রামের দুর্গা মণ্ডল এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তার উৎপাদন খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা এবং তিনি ওই জমি থেকে প্রায় ১২ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
সরিষা চাষি দুর্গা মণ্ডল বলেন, সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করলে সরিষা ভালো হয়। কৃষকরা প্রতি বিঘা জমি থেকে তিন থেকে চার মণ সরিষার ফলন পেতে পারেন।
উপজেলার কৃষকরা বলেন, তারা একই জমিতে আগাম আমন ধান কাটার পর সরিষা চাষ করছেন এবং পরে আবার সেখানে বোরো ধান চাষ করছেন। ফলে, তারা একই জমি থেকে বছরে তিনটি ফসল উৎপাদন করতে পারছেন, পাশাপাশি মাটির উর্বরতাও বজায় থাকছে।
তারা বলেন, সরিষা চাষের খরচ তুলনামূলকভাবে কম এবং লাভ বেশি। সরিষা চাষের উদ্দেশ্য হলো— পরিবারের তেলের চাহিদা মেটানো এবং বাকিটা বিক্রি করা।
এদিকে সরিষা ক্ষেতে ফলন বাড়াতে সারিবদ্ধভাবে মৌচাক বসানো হয়েছে। মৌমাছি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করার ফলে পরাগায়ন বৃদ্ধি পায়, যা ভালো উৎপাদনে সহায়তা করে। একই সঙ্গে মধু বিক্রি করে অতিরিক্ত আয়ও হয়।
একজন মধু চাষি বলেন, মৌমাছি উপকারী, ক্ষতিকর নয়। তারা সরিষা ক্ষেতে পরাগায়নে সাহায্য করে।
এ বছর কৃষকরা উচ্চফলনশীল সরিষার জাত চাষ করেছেন, যা কম জমিতে বেশি ফলন দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকদের সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
খুলনা অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আশাবাদী যে এ বছর উৎপাদন বেশি হবে। আমরা কৃষকদের ভালো ফলন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছি।