শিরোনাম

এনামুল হক এনা
পটুয়াখালী, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় তরমুজ আবাদ মৌসুম শুরু হতে না হতেই আবারও সার সংকটে উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তরমুজ চাষিরা। পটুয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলার বাজারসহ স্থানীয় বাজারে সারের সরবরাহ কম থাকায় অধিক দাম দিয়ে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। এতে তরমুজের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তরমুজ চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর ৮টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে মোট ২৭ হাজার ৩২৬ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নভেম্বর মাসের শেষ দিক থেকেই কৃষকেরা জমি প্রস্তুত ও বীজ রোপণের কাজ শুরু করেছেন। তবে মৌসুমের শুরুতেই সারের সংকট দেখা দেওয়ায় চাষাবাদ কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের জন্য জেলার চাহিদা অনুযায়ী টিএসপি, ইউরিয়া ও ডিএপি সারের বরাদ্দ চাওয়া হলেও সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ২৪২ মেট্রিক টন। এর ফলে বাজারে এসব সারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি দামে সার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন চাষিরা।
গত বছর পটুয়াখালী জেলায় ২৭ হাজার ৩২৬ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। এতে উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩২ মেট্রিক টন তরমুজ। ন্যূনতম ৪০ টাকা কেজি দরে যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। জেলার অর্থনীতিতে তরমুজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল হওয়ায় চলতি মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হলে এর প্রভাব পড়বে চাষি থেকে শুরু করে স্থানীয় বাজার পর্যন্ত।
সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি একর জমিতে তরমুজ চাষে টিএসপি, ইউরিয়া, এমওপি ও ডিএপি মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ বস্তা সার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় অনেকেই প্রয়োজনের অর্ধেক সারও সংগ্রহ করতে না পারায় উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।
রাঙ্গাবালী উপজেলার চর নজির এলাকার চাষি মাসুদ ফকির বলেন, এবার আমি ৩ একর ২২ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করছি। আমার কমপক্ষে ৪০ বস্তা সারের দরকার হলেও কিনতে পেরেছি মাত্র ১০ বস্তা সার। তাও আবার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। সময়মতো সার না দিতে পারলে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার বানাতিপাড়া এলাকার চাষি রুহুল আমিন জানান, তারা ১০ জন কৃষক মিলে প্রায় ৫০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের মোট ৫০০ বস্তা সারের প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিনতে পেরেছি মাত্র ১০০ বস্তা। গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন দোকানে ঘুরেও প্রয়োজন অনুযায়ী সার পাইনি। এভাবে চললে উৎপাদন ব্যাহত হবে। আর উৎপাদন ব্যাহত হলে আমাদের লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের বাদুরা গ্রামের তরমুজ চাষি মহিব্বুল্লাহ আজাদ বলেন, সার কিনতে গেলে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিলারদের কাছ থেকেই তারা ঠিকমতো সার পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ সুযোগ বুঝে বেশি দাম চাইছেন। এতে আমরা বিপাকে পড়েছি।
এদিকে দুমকি, বাউফল ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন চাষি একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। বাউফল উপজেলার এক কৃষক জানান, মৌসুমের শুরুতে সার না পেলে পরে জমিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেওয়া সম্ভব হয় না। এতে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলন কমে যায়।
কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক চাষিই তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ধাপে ধাপে সার ব্যবহার করছেন না। অধিক ফলনের আশায় একসঙ্গে বেশি সার প্রয়োগের প্রবণতা রয়েছে। আবার ভবিষ্যতে সংকটের আশঙ্কায় মৌসুমের শুরুতেই বেশি সার সংগ্রহে নেমে পড়ছেন অনেকে। এতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে এবং কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বলেন, “বাউফলে বর্তমানে সারের কোনো প্রকৃত সংকট নেই। সার সঙ্কটের বিষয়ে আমরা এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা তথ্য পাইনি। তবে কেউ যদি কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করে কৃষকদের হয়রানি করার চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি।”
এ বিষয়ে পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আমানুল ইসলাম বাসসকে বলেন, “জেলার কোথাও সার সংকট রয়েছে—এমন নির্দিষ্ট তথ্য এখনো আমার কাছে আসেনি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি হলে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
তিনি বলেন, তরমুজ মৌসুমের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সরবরাহ বাড়ানো হলে বড় ধরনের সংকট থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন।
চাষিরা বলছেন, দ্রুত বাজারে সার সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে তরমুজ উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। সময়মতো প্রয়োজনীয় সার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজার তদারকি জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন তারা।