শিরোনাম

ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের স্বতন্ত্র সচিবালয় স্থাপনের মধ্য দিয়ে সুপ্রীমকোর্ট আর্থিকভাবে স্বাধীন এবং বিচার বিভাগ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হলো।
আজ বিকেলে সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি একথা বলেন।
সুপ্রীম কোর্টের পৃথক সচিবালয় উদ্বোধনের পর আইন উপদেষ্টা উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলেন,
“আজ বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথে একটা ঐতিহাসিক দিন। সুপ্রীম কোর্টের পৃথক একটি সচিবালয় আইন করার জন্য বিগত দুই দশক তিন দশক যাবৎ বিভিন্ন রকম চেষ্টা করা হলেও সচিবালয় করা সম্ভব হয়নি। এটা প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের মানুষের যে লাভ হবে তা হচ্ছে আগে যে শোনা যেত দেশে যে-সকল অধস্তন আদালত আছে সেগুলোর ওপর রাজনৈতিক সরকারের মন্ত্রীরা ছিল, বিশেষত আইনমন্ত্রীরা অনেক ধরনের খবরদারি করতেন। জামিন, মামলার রায় বা বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি সমস্ত কিছু রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। এখন থেকে আর এমন রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না।”
তিনি আরো বলেন, “আইন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের যে প্রধান বিচারপতি আছেন, তাঁর নেতৃত্বে যে সচিবালয় আছে, সেখানে ন্যস্ত করা হয়েছে। এটা ছাড়াও এই সচিবালয়ের মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্ট আর্থিক স্বাধীনতা পেয়েছে।”
সুপ্রীম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঐকান্তিক চেষ্টার কথা স্মরণ করে তিনি আরো বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এই আইনটা পাশ হয়েছে এবং এটার পিছনে আমাদের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ প্রথম থেকে অত্যন্ত উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছেন। আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন, পথ দেখিয়েছেন।”
তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আগামীতে এই সচিবালয় বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে একটি বিরাট ভূমিকা রাখবে।
আজ বিকেল ৩টা ২০ মিনিট সুপ্রীম কোর্টের প্রশাসনিক ভবন-৪ (সুপ্রীম কোর্ট জামে মসজিদ সংলগ্ন) এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
এসময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলর সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান সিনিয়র এডভোকেট জয়নুল আবেদীনসহ আরো অনেকে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও কার্যকর তদারকি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশের বিচার ব্যবস্থায় নতুন মাইলফলক সূচিত হয়।
এদিন রাষ্ট্রপতির নির্দেশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে।
এর আগে গত ২০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করে, যা পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনের দীর্ঘদিনের দাবিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথ সুগম করে।
উল্লেখ্য, বিচার বিভাগের কাঠামোগত স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতাকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে গত বছরের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
প্রস্তাবে সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের আলোকে হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন আদালত ও ট্রাইবুনালের ওপর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকরভাবে পালনের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। সঙ্গে অধ্যাদেশের খসড়া, নতুন সচিবালয়ের অর্গানোগ্রাম এবং রুলস অব বিজনেস ও এ্যলোকেশন অব বিজনেস সংশোধনের সম্ভাব্য রূপরেখা পাঠানো হয়।
‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি ও সচিবালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিবাচক সহযোগিতায় বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আজ বাস্তবরূপ নিলো।