শিরোনাম

ঢাকা, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রাণিসম্পদ, হাঁস-মুরগি এবং জলজ চাষে উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যার ফলে মাছ, দুধ, মাংস এবং ডিমের উৎপাদনে ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে।
বিআইডিএস’র গবেষণায় বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ জলজ চাষের প্রভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে মাছের মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ৪৭ লাখ ৬ হাজার টন। এই অর্জন সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনও গম, ডাল, ভোজ্য তেল, দুগ্ধজাত পণ্য এবং আরও বেশ কয়েকটি খাদ্যসামগ্রী আমদানির উপর খুব বেশি নির্ভরশীল। যা দেশের খাদ্য ব্যবস্থাকে বৈশ্বিক বাজারের অস্থিতিশীলতার মুখে ফেলে দিচ্ছে।
‘পার্সপেক্টিভস অন দ্য অ্যাগ্রিফুড সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার প্রবৃদ্ধি ধীর হতে শুরু করেছে, যেখানে টোটাল ফ্যাক্টর প্রডাক্টিভিটি (টিএফপি) স্থিতিশীল হয়ে যাচ্ছে। দেশের শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেক এখনও এই খাতে নিয়োজিত এবং এটি জিডিপিতে প্রায় এক-চতুর্থাংশ অবদান রাখে।
আজ মঙ্গলবার বিআইডিএস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে গবেষণাটির মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার।
বিআইডিএস মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিআইডিএস এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞ, কৃষি অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ এবং গবেষকরাও বক্তব্য রাখেন।
গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশ ২০০০-এর দশকে ভূমি এবং শ্রম উৎপাদনশীলতায় দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করেছিল। তবে ফলন বৃদ্ধির স্থবিরতা, আবাদি জমি কমে যাওয়া এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সেই অগ্রগতির গতি কমে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন এখন খাতটির জন্য অন্যতম শক্তিশালী বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সেমিনারে উপস্থাপিত দীর্ঘমেয়াদি মডেলিং অনুযায়ী তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ইতোমধ্যেই ফসল উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে। ধান, গম, শাকসবজি, ডাল এবং তেল বীজের ফলন ২০৫০ সাল পর্যন্ত ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, তাপমাত্রাজনিত চাপ এখন কৃষি শ্রমের উপর একটি বড় সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে। যার ফলে কিছু অঞ্চলে শ্রম উৎপাদনশীলতা আনুমানিক ১১ শতাংশ এবং শ্রম আয় ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস ঘটেছে।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস উৎপাদন ব্যবস্থায় কাঠামোগত দুর্বলতাকে প্রবৃদ্ধির প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, টানা কয়েক দশকের শক্তিশালী অগ্রগতির পর জলবায়ুর প্রভাব, ইনপুট খরচ বৃদ্ধি, জমির সংকট এবং দুর্বল বৈচিত্রায়নের কারণে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনশীলতা গতি হারাচ্ছে।
ড. ইউনুস জানান, ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ধান উৎপাদনের খরচ বার্ষিক ৩.৪৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেলেও উৎপাদিত ধানের দাম বেড়েছে মাত্র ১.৩১ শতাংশ। যা কৃষকের মুনাফা কমিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ধানের বাজারে মিলার ও ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।