বাসস
  ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:১৬

সড়ক সংস্কারে দীর্ঘসূত্রিতা, ভোগান্তিতে খাগড়াছড়ির বাসিন্দারা

ছবি: বাসস।

জীতেন বড়ুয়া

খাগড়াছড়ি, ২৩ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস): প্রকল্প শুরুর পর দুই বছর পার হলেও জেলার রামগড় থেকে চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট সড়ক পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের মাত্র ৪৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। কয়েক দফায় সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি ৫৩ শতাংশ কাজ। ধীরগতির কাজের কারণে রাস্তায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। 

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১০ মাস ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্মাণাধীন সেতু ও কালভার্টগুলোর পাশে ফেলে রাখা রডে মরিচা ধরেছে। এ ছাড়া অর্ধেক খোঁড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত । প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রামগড় ও বারইরহাটের বাসিন্দারা। দ্রুত এই সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ করার তাগিদ দিচ্ছেন তারা। 

সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দর দিয়ে ৩ ঘণ্টায় ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে ১২০০ কোটি টাকায় সড়ক প্রশস্ত করার কাজ হাতে নেওয়া হয়। বারইয়ারহাট (চট্টগ্রামের মিরসরাই)-হেঁয়াকো (ফটিকছড়ি)-রামগড় (খাগড়াছড়ি) সড়ক প্রশস্তকরণের সেই কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালে। কথা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। ভারত বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে সড়কটি ১৮ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৩৮ ফুট করার দায়িত্ব পায় ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারতীয় অশোকা বিল্ডকন লিমিটেড। এরই মধ্যে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তবে কাজ হয়েছে অর্ধেক। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হলেও টনক নড়েনি ঠিকাদারের। গত দুই বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি ও কাজের ধীরগতির কারণে তৈরি হয়েছে সড়কে অসংখ্য খানাখন্দ। ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অশোকা বিল্ডকন লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার সন্দীপ দে প্রকল্পের কাজ বন্ধ ও ধীর গতি প্রসঙ্গে বাসসকে বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। ভূমি জটিলতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সরেজমিনে বারইয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের আওতাভুক্ত কোথাও কাজ করতে দেখা যায়নি। অনেক নির্মাণাধীন কালভার্ট, সেতুর জায়গায় লোহার রডগুলোতে মরিচা ধরে আছে। নির্মাণাধীন সড়কটির অনেক জায়গায় খানাখন্দে ভরা।

খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রুপ এর সভাপতি মো. আসলাম কালু বাসসকে বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টের পর নানা জটিলতায় ১০ মাস কাজ বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের জুনে আবারও শুরু হয় কাজ। তবে ধীরগতির কারণে বেড়েছে দুর্ভোগ।

প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। সেটা বর্তমানে কেটে গেছে। আমরা ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে ২৩ কিলোমিটার সড়ক ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছি। বন বিভাগের সঙ্গে কিছু সমস্যা ছিল, তাও সমাধান হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।’

চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, বারইয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। এ ছাড়া প্রকল্পের কিছু সমস্যা ছিল। তিনি জানান, প্রকল্পটি শেষ হতে আগামী ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। সে দিক বিবেচনা করে প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর বাড়ানো হয়। বর্তমানে প্রকল্পের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, খাগড়াছড়ি - ঢাকা সড়কের রামগড় করের হাট অংশটি এখন খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি উচ্চ মহলে জানানো হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, কাজ শেষ হলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বারইয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক ব্যবহার করে রামগড় স্থলবন্দর দিয়ে সহজে ভারতে পণ্য রপ্তানি করা যাবে। মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক শিল্পনগরের সঙ্গে যোগাযোগও সহজ হবে। এতে সময় ও পরিবহন ব্যয় সাশ্রয় হবে। আমদানি-রপ্তানিতেও গতি আসবে।