শিরোনাম

-মো. তানিউল করিম জিম-
বাকৃবি (ময়মনসিংহ), ৮ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : হঠাৎ করেই হাঁস মারা যায়, কিন্তু কৃষক অনেক সময়ই এর কারণ জানেন। এই নীরব মৃত্যুর কারণে হাঁস চাষে দেখা দেয় ব্যাপক ক্ষতি, ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে অনেকে হাঁস চাষ ছেড়ে দেন। এ সমস্যা সমাধান ও হাঁসের প্লেগ রোগের ভয়াবহতা রোধে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক উদ্ভাবন করেছেন দুটি নতুন ভ্যাকসিন- ‘ইনঅ্যাক্টিভেটেড’ এবং ‘লাইভ অ্যাটেনিউয়েটেড’ ডাক প্লেগ ভ্যাকসিন। যার মধ্যে ‘লাইভ অ্যাটেনিউয়েটেড ডাক প্লেগ’ ভ্যাকসিনটি মাঠ পর্যায়ে খামারিদের কাছে পৌঁছানোর জন্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ভ্যাকসিন গবেষক দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ড. মো. বাহানুর রহমান। গবেষক দলে আরও ছিলেন পিএইচডি ফেলো ডা. লায়লা ইয়াসমিন এবং প্রকল্পে কো-পিআই হিসেবে যুক্ত ছিলেন মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফেরদৌস উর রহমান খান।
লাইভ স্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের অধীনে ‘ডেভেলপমেন্ট অব লো কস্ট ইনঅ্যাক্টিভেটেড এবং লাইভ অ্যাটেনিউয়েটেড ডাক প্লেগ ভ্যাকসিন ইউজিং লোকাল ডাক প্লেগ ভাইরাস’ প্রকল্পের আওতায় মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
প্রধান গবেষক ও বাকৃবি’র ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান জানান, উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন দু’টি সফলভাবে পরীক্ষাও করা হয়েছে। বাংলাদেশের হাঁস খামারিদের জন্য এটি একটি সুখবর। গত বুধবার (৫ নভেম্বর) উদ্ভাবিত ‘লাইভ অ্যাটেনিউয়েটেড ডাক প্লেগ’ ভ্যাকসিনের সিড প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। ‘ইনঅ্যাক্টিভেটেড ডাক প্লেগ’ ভ্যাকসিনটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে অধিকতর গবেষণা করা হবে।
তিনি জানান, ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে হাঁস-মুরগির জীবিকা-সম্পর্কিত রোগ প্রতিরোধে একটি ভ্যাকসিন উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করা হয়। এটি ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও বর্তমানে প্রকল্পটির সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী প্রচলিত ডাক কলেরা ও ফাউল পক্স ভ্যাকসিন ব্যবহারের পরও হাঁসের মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ থেকে শুরু করে কখনও ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুহার (মর্টালিটি) দেখা গেছে, যা একটি নতুন ও কার্যকর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তাকে স্পষ্ট করে। এই রোগটি একটি ডিএনএ ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। এটি মূলত দূষিত পানি ও সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় এবং হাঁসের যকৃৎকে আক্রমণ করে।
ইতিপূর্বে হাওর অঞ্চলে কাজ করতে গিয়ে ডাক কলেরা ও ডাক প্লেগ রোগের ভয়াবহতা তারা প্রত্যক্ষ করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রোগের প্রেক্ষাপট ও গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান জানান দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রথমে মৃত হাঁস সংগ্রহ করা হয়। নমুনা সংগ্রহের পর দেখা যায়, সিংহভাগ হাঁসেরই মৃত্যু হয় ডাক প্লেগ রোগে। এই প্যাথোজেনিক ডাক প্লেগ ভাইরাস হাঁসের ডিমের ভ্রূণে প্রবেশ করিয়ে বংশবৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সেখান থেকে ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে।
ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও প্রকারভেদ সম্পর্কে গবেষক বাহানুর বলেন, ভ্যাকসিনটি পরীক্ষামূলকভাবে কিছু হাঁসের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। চ্যালেঞ্জ টেস্টে দেখা গেছে, ইনঅ্যাক্টিভেটেড ডাক প্লেগ ভ্যাকসিনটি ৮৮ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করেছে। অন্যদিকে যে হাঁসগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি, সেখানে ৯৩ শতাংশ হাঁস মারা গেছে। ‘ইনঅ্যাক্টিভেটেড’ ভ্যাকসিনটি স্বল্পমেয়াদে এবং ‘লাইভ অ্যাটেনিউয়েটেড’ ভ্যাকসিনটি দীর্ঘ মেয়াদে হাঁস লালনপালনে সুরক্ষা দেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।