বাসস
  ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:২০

আগামী জুনের মধ্যে লংগদু সড়কে স্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে

ছবি: বাসস

জীতেন বড়ুয়া

খাগড়াছড়ি, ৪ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস): জেলার দীঘিনালার মেরুং ও রাঙামাটির লংগদু উপজেলাবাসীর দুঃখ লাঘবে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চল্লিশ কিলোমিটারের রাস্তার চার লোহার সেতু ভেঙে স্থায়ীভাবে আরসিসি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বাসসকে বলেন, জেলার প্রায় সবকটি বেইলি ব্রিজ আরসিসি ব্রিজে রূপান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট এ চারটি ব্রিজ স্থায়ী আরসিসি ব্রিজে রূপান্তর করা হবে। এটি যথাশীঘ্র বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পত্রপ্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী জুনের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজ চারটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এতে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, লংগদু উপজেলা প্রশাসনিকভাবে রাঙামাটি জেলাধীন হলেও ভৌগোলিকভাবে এই উপজেলার সড়কপথে যোগাযোগ খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সাথেই।

ফলে খাগড়াছড়ি জেলা সদর-চট্টগ্রাম-রাঙামাটি এবং ঢাকা যেতে হলেও তাদের সড়কপথে দীঘিনালা অতিক্রম করতেই হয়। বর্তমানে দীঘিনালা- লংগদু- সড়কের ৪টি বেইলি ব্রিজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বেশিরভাগ সময় এই ব্রিজগুলোর ওপর দিয়ে কোনো পণ্য বোঝাই বা কাভার্ডভ্যান অতিক্রম করলে পাটাতন নিচের দিকে নেমে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায়ই ঘটছে এমন ঘটনা। এতে করে ভোগান্তিতে পড়তে হয় রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলা এবং দীঘিনালা উপজেলার বাসিন্দাদের। এর স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সমস্যাকবলিত চারটি বেইলি ব্রিজ হচ্ছে বোয়ালখালীছড়া ব্রিজ, মেরুং বাজার ব্রিজ-১ ও ২ এবং বেতছড়ি ব্রিজ। এ চারটি ব্রিজ এতই পুরাতন যে পণ্য বোঝাই কোনো ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান অতিক্রমকালে সেতুগুলো নিচের দিকে দেবে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দুই উপজেলার বাসিন্দাদের।

লংগদু উপজেলার বাসিন্দা সাংবাদিক বিপ্লব ইসলাম বলেন, রাঙামাটির লংগদুর বাসিন্দাদের জন্য সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় সহজেই যাতায়াত করা যায়। লংগদু থেকে এ সড়ক দিয়ে সাধারণত গবাদিপশু, তামাক, বনজ দ্রব্য, কাঠ, ফুলঝাড়ু, আদা, হলুদ, কলা, আনারস, বাঁশ-বেতসহ নানা কৃষিপণ্য দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি আনা হয়। এরপর সেখান থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠানো হয়।

দীঘিনালার তরুণ সমাজকর্মী ও সংগঠক আকতার হোসেন বাসসকে বলেন, দীঘিনালা উপজেলার অধিকাংশ বাসিন্দা এই সড়কের ওপর নির্ভরশীল। ফলে লংগদুবাসীর ভোগান্তির সাথে দীঘিনালা একাকার। একদিকে সড়কটি পাহাড়ি পথে আঁকাবাঁকা। অন্যদিকে চওড়া মাত্র ১২ ফুট। ফলে দুটি পণ্য বা যাত্রীবাহী গাড়ি মুখোমুখি হলে অতিক্রম করতেই সময় চলে যায় অনেক। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ সড়ক দিয়ে সবসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। কিছুদিন পরপর সেতুর পাটাতন দেবে যাওয়ার কারণে ভোগান্তিতেও পড়তে হয়।

দীঘিনালা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং মেরুং ইউনিয়নের বাসিন্দা ডা. শফিকুর রহমান বাসসকে বলেন, ভারী যানবাহন চলাচল ও বন্যার কারণে প্রায়ই ব্রিজের পাটাতন খুলে পড়ে। এতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি স্থবির হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও। দীঘিনালা উপজেলার একাংশ এবং পুরো লংগদু উপজেলার মানুষ এসব সেতু দিয়েই সড়কপথে সারাদেশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে।

খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন চৌধুরী বাসসকে বলেন, এই সেতুর কারণে দুই উপজেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ বছরের পর বছর ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। অনেক সময় আমাদের পণ্য ও যাত্রীবাহী গাড়িও কয়েকদিন ধরে আটকা পড়ে থাকে। তবে এর স্থায়ী সমাধানে সড়ক বিভাগ এগিয়ে এসেছে জেনে অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছি।

খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান বাসসকে বলেন, চারটি সেতুই অনেক পুরোনো। সেতুগুলোর ওপর দিয়ে পাঁচ টনের অধিক ওজনের যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও তা মানছেন না অনেকেই। ফলে প্রায়ই যোগাযোগ বিভ্রাট ঘটছে। এতে সড়ক বিভাগ-যাত্রী-গণপরিবহণ এবং সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

তিনি জানান, সেতুগুলো স্থায়ীভাবে পাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারপরও যখনই সেতুতে সমস্যা দেখা দেয় দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানে কাজ করে সেতু কর্তৃপক্ষ।

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, খাগড়াছড়ি জেলার ৪২টি বেইলি ব্রিজ ইতোমধ্যেই আরসিসি ব্রিজে রূপান্তর করা হয়েছে। সেসময় এই চারটি ব্রিজ অন্যান্য ব্রিজের চেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল বলে তখন দ্বিতীয় ধাপে এ ব্রিজগুলো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে এ চারটি বেইলি ব্রিজকে আরসিসি ব্রিজ হিসেবে নির্মাণের জন্য নতুন করে প্রাক্কলন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেতুগুলো পাকা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হলে সেতুগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।’