বাসস
  ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৩৬

রাজশাহীতে অসময়ের বৃষ্টিতে পানির নিচে আমন, দুশ্চিন্তায় কৃষক

অসময়ের টানা বৃষ্টিতে রোপা আমন ধানের ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। ছবি : বাসস

।। ওমর ফারুক।।

রাজশাহী, ২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এ মৌসুমে অধিক ফলনের আশা ছিল কৃষকদের, মাত্র কয়েকদিন পরেই আমন ঘরে উঠবে। কিন্তু এরইমধ্যে অসময়ের টানা বৃষ্টিতে ধানের ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। 

জানা গেছে, গত বুধবার থেকে রাজশাহী মহানগর ও আশপাশের উপজেলাগুলোতে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। প্রথম ২ দিন ভারী বৃষ্টি না হলেও পরের ২ দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি ও বাতাস বয়ে যাচ্ছে। রাতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যায়। এতে মাঠের পাকা আমন ধান পড়ে গিয়ে পানির নিচে তলিয়ে যায়। তানোর, পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে আমন ধান রোপণ করেছেন কৃষকরা। তবে বেশি ক্ষতি হয়েছে, পবা, তানোর ও বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলায়। 

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা তারেক আজিজ বলেন, রাজশাহীতে ২৪ ঘণ্টায় ৬০ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, পবা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মাঠে মাঠে সোনালি রঙে পাক ধরা রোপা আমন হঠাৎ দুই দিনের ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টির কারণে মাজা ভেঙে জমিতে পানির নিচে পড়ে রয়েছে। তানোর উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া, কামারগাঁ, পাঁচন্দর ও কলমা ইউনিয়ন এবং তানোর পৌরসভায় রোপা আমন ধান ডুবে গেছে। জমির পানি দ্রুত নিস্কাশন না হলে বেশি ক্ষতি হবে। এ নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন। এছাড়া ভারী বৃষ্টির কারণে গ্রামীণ রাস্তা ঘাট পানিতে ডুবেছে। পুকুর ও খালের পানি ঢুকে পড়েছে গ্রামে। এতে অনেকে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন। 

তালন্দ ইউনিয়নের কালনা গ্রামের কৃষক হান্নান, তোফাজ্জল, বাদল ও হাসান আলী জানান, দুই দিনের ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির পানিতে তাদের মাঠের ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। 

তানোর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কামারগাঁ ব্লকের কামারগাঁয়ে ৩০ হেক্টর, মাদারিপুরে ৮ হেক্টর, ছাঐড়ে ১৪ হেক্টর, কৃষ্ণপুরে ৫ হেক্টর; পাঁচন্দর ব্লকের মোহাম্মদপুরে ৭ হেক্টর, চাঁদপুরে ১০ হেক্টর এবং চান্দুড়িয়া ব্লকের চান্দুড়িয়ায় ১৫ হেক্টর, সিলিমপুরে ৫ হেক্টরে রোপা আমন ধান পানিতে ডুবেছে। এছাড়া তানোর পৌরসভায় ডুবেছে ১১০ হেক্টর। সব মিলে ২০৩ হেক্টর রোপা আমন ধান পানিতে ডুবেছে। 

তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, উপজেলায় রোপা আমনের চাষাবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। তবে ধান ডুবেছে পুরোপুরি ভাবে ৪৬ হেক্টর এবং আংশিক ডুবছে ১৫৭ হেক্টর জমি। 

এদিকে বাগমারা ও তার পাশের এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোন্থা’র প্রভাবে অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিতে মাঠ-ঘাটে ফসলের জমিতে পানি থৈ-থৈ করছে। বুধবার বিকেল থেকে শনিবার পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় হালকা বৃষ্টি হলেও শনিবার রাতে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে এলাকার কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। অতিবর্ষণে মাঠ-ঘাট পানিতে ডুবে রবি মৌসুমের উড়তি রোপা-আমন ধান, রোপণকৃত পিঁয়াজ, সরিষা, পানবরজ, মরিচ, বেগুন, শিমসহ নানা ফসল ও পুকুর ভেসে চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

বালানগর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম, আনছার আলী ও ফসির উদ্দিন জানান, সরিষা বপনের উপযুক্ত সময় পেয়ে সরিষা ৫/৬ দিন আগে রোপণ করা হয়। কিন্ত বপনের পরের দিন থেকে বৃষ্টিতে জমিতে পানি আটকে আছে।  

বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চলতি মৌসুমে শাক-সবজি, মরিচসহ বেশ কিছু ফসলে চাষিরা লাভবান হওয়ার কথা থাকলেও প্রচুর বৃষ্টিতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া তানোর-গোদাগাড়ীর কোনো কোনো এলাকার হঠাৎ বন্যায় পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, দ্রুত জমির পানি নিষ্কাশন করা গেলে বৃষ্টিতে ধানের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর রাজশাহীতে ৮৩ হাজার ৫৫০ হেক্টের জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় ভালো ফলন হবে আশা করা হচ্ছে।