শিরোনাম
নেত্রকোণা, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : দেশের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রমজানের পরিবারকে সদর উপজেলার মদনপুরের নন্দীপুর গ্রামে নবনির্মিত একটি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নবনির্মিত ঘরের চাবি শহীদ রমজানের বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।
এসময় তিনি শহীদ রমজানের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন এবং তার কবর জিয়ারত করে আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা বিনতে রফিক এসময় উপস্থিত ছিলেন।
শহিদ রমজানের বাবা লিটন মিয়া বাসস’কে জানান, ‘আমার ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে, জীবিকার প্রয়োজনে নিজের ঘর সাজানোর জন্য সে ঢাকায় গিয়েছিল। সে ঘর আজ আমরা পেয়েছি, কিন্তু আমার সন্তানকে কখনো আর ফেরত পাব না। যে মহান উদ্দেশ্যে আমার সন্তান নিজের প্রাণ দিয়েছে তা যেন বাস্তবায়ন হয়, সুন্দর বাংলাদেশ হয়।’
বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান ছিলেন রমজান। এসএসসি পাসের পর হাল ধরতে বাধ্য হন সংসারের। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। জীবিকার জন্য পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। কাজ করতেন আকিজ গ্রুপের সেলসম্যান হিসেবে। রামপুরায় আত্মীয়ের বাসায় খরচ ভাগাভাগি করে থাকতেন। কৃষক বাবার এই সন্তান চাকরি করে যা আয় করতেন, নিজের খরচের টাকা রেখে বাকিটা বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন বাবা-মা এবং ছোট ভাইয়ের জন্য। দুই ভাই, এক বোন আর বাবা-মা নিয়ে ছোট্ট সুখের নীড় ছিল তাদের।
একমাত্র ছোটভাই শাহিনকে ফোন করে আন্দোলনে না গিয়ে বাড়িতে বাবা মায়ের পাশে থাকতে বলেছিলেন তিনি।
কিন্তু ১৯ জুলাই নিজেই নেমে যান রাজপথে। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তিনি যোগ দেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। রামপুরায় তখন ছাত্র-জনতার বিপ্লবী স্লোগানে উত্তপ্ত রাজপথ। রমজান যোগ নে রামপুরার ওয়াপদা রোডের ছাত্র-জনতার মিছিলে। পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। রমজান গুলিবিদ্ধ হন। রাজপথে লুটিয়ে পড়েন তিনি। গলার ঠিক নিচ দিয়ে রমজানের ফুসফুস ভেদ করে চলে যায় গুলি। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। ছাত্র-জনতা রক্তাক্ত রমজানকে ধরাধরি করে নিয়ে যায় রামপুরার ওয়াপদা রোডের বেটার লাইফ হসপিটালে। সেখানে শুরুতে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু সহযোদ্ধারা মোবাইলে ভিডিওধারণ শুরু করলে কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রমজান। সেদিনই তার লাশ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি নন্দীপুরে।
বাড়ির সামনে ফসলের মাঠ। নিজ বাড়ির আঙিনায় সবুজ ধানক্ষেতের পাশে নারকেল গাছের ছায়ায় দাফন করা হয় শহীদ রমজানকে।