শিরোনাম
ঢাকা, ১১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অঙ্গনে নতুন গৌরবের অধ্যায় রচনা করেছে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও সম্মানজনক র্যাঙ্কিং সংস্থা টাইমস হায়ার এডুকেশন প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২৬’- এ স্থান করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রথমবার অংশগ্রহণ করেই এমআইএসটি ১৫০১+ অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে, যা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী পরিচালিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক। এই অর্জনের মাধ্যমে এমআইএসটি শুধু দেশের প্রকৌশল শিক্ষার মানকেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরেনি, বরং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং’-এ অংশ নিতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা ও গবেষণার মান, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, উদ্ধৃতি সংখ্যা, শিল্পখাতে অবদান এবং শিক্ষা দান পদ্ধতির উৎকর্ষসহ একাধিক কঠোর মানদণ্ডে মূল্যায়ন করা হয়। এমআইএসটি এই সকল সূচকে উৎকর্ষতা প্রদর্শন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের অবস্থান সুসংহত করেছে।
বর্তমানে এমআইএসটি ১৩টি বিভাগে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও গবেষণামূলক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক উৎকর্ষের পাশাপাশি গবেষণায় সম্পৃক্ত করতে প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ গুরুত্বারোপ করছে। এ বছর এমআইএসটি নিজস্ব উদ্ভাবিত তিনটি প্রযুক্তিপণ্য পেটেন্টের স্বীকৃতি পেয়েছে, যা দেশের প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবন খাতে একটি বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এসব পণ্য প্রতিরক্ষা, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাস্তব প্রয়োগের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
এমআইএসটি বর্তমানে যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, মালয়েশিয়া এবং কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ গবেষণা ও একাডেমিক সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, যৌথ প্রকল্প ও শিক্ষার্থী বিনিময় কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজের অবস্থান শক্ত করছে।
এ উপলক্ষে এমআইএসটির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ এক অভিনন্দন বার্তায় বলেন, ‘এমআইএসটির এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা খাতের জন্য এক বিশাল অর্জন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক ও কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই অবস্থানে পৌঁছেছি। ভবিষ্যতে এমআইএসটি একাডেমিক ও গবেষণার মানোন্নয়নে আরও এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বমানের একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।’
শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের পাশাপাশি এমআইএসটি দেশের টেকসই উন্নয়ন, স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সাইবার নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্মার্ট সিটি পরিকল্পনা, প্রতিরক্ষা প্রকৌশল ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি নিয়ে একাধিক গবেষণা প্রকল্প বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন।
এমআইএসটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত। তাদের মতে, এই অর্জন বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষাকে বৈশ্বিক অঙ্গনে আরও দৃশ্যমান করবে এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গবেষণার আগ্রহ ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার প্রতি অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করবে।
এমআইএসটি পরিবার এই অর্জনকে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার গৌরবময় যাত্রার এক ঐতিহাসিক সংযোজন হিসেবে দেখছে।