শিরোনাম
\ মুহাম্মদ নূরুজ্জামান \
খুলনা, ৮ অক্টোবর ২০২৫ (বাসস) : প্রচলিত মশা প্রতিরোধক থেকে অধিক কার্যকর এবং মানব শরীরের জন্য কম ক্ষতিকর বিকল্প মশা প্রতিরোধক উদ্ভাবন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)র একদল শিক্ষার্থী। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাজ শিল্ড’। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এফবিসিসিআই ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (এফবিসিসিআই আইআরসি) প্রতিযোগিতায় সেরা দশে স্থান করে নিয়েছে এ উদ্ভাবন।
এটিকে আরও উপযোগী করে জনকল্যাণে ব্যবহার করতে কাজ করছেন উদ্ভাবকরা। তবে এর জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
উদ্ভাবক শিক্ষার্থীরা হলেন; সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিশাত জাহান নাদীরা, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মুকাররম হোসেন, পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সৌরভ হোসেন এবং গণিত ডিসিপ্লিনের ২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেফাদুজ্জামান রাতুল।
উদ্ভাবক দল জানান, সারা দেশে মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় দেশের বাজারে প্রচলিত মশার কয়েল কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই ব্যর্থতার পাশাপাশি তা থেকে নির্গত ধোঁয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করছেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়াও মশা তাড়াতে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন কোম্পানির ইলেকট্রিক যন্ত্রও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
তারা জানান, এ বিষয়টি উপলব্ধি করেই মশা তাড়াতে বিকল্প কিছু তৈরির উদ্যোগ নেন তারা। উদ্ভাবন করেন ‘বাজ শিল্ড’। প্রাথমিক পরীক্ষায় এটি কার্যকর বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। এটি নিয়ে আরও গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।
টিমের সদস্য নিশাত জাহান নাদীরা বলেন, বর্তমান সময়ে মশা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। চার সদস্যের একটি পরিবারে শুধু মশার পেছনে কমপক্ষে খরচ হয় ৮০০ থেকে হাজার টাকা। যার মাধ্যমে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে কয়েলের বিকল্প নিয়ে ভাবা শুরু করি। দীর্ঘ ছয় মাস গবেষণা করে কয়েলের বিকল্প তৈরি করতে পেরেছি। প্রাথমিকভাবে এটি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ময়ূর নদীসংলগ্ন এলাকায় প্রয়োগ করি। এটা এখন পর্যন্ত খুবই কার্যকর ফল দিয়েছে। এটিকে আরও কার্যকর করতে আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে।
এর কারিগরি দিক নিয়ে মো. মুকাররম হোসেন বলেন, মশা ওড়া, শব্দ তৈরি, কামড় দেওয়া থেকে সুরক্ষা দিতেই 'বাজ শিল্ড' নাম দেওয়া হয়েছে। এটি তৈরিতে বেশি কিছু প্রয়োজন নেই। একটি পচনশীল ব্যাগ এবং তিন ধরনের ওষুধ। এই ওষুধগুলোও ন্যাচারাল এবং পরিবেশসম্মত। ব্যাগে এক লিটার পানির মধ্যে ওষুধগুলো মেশালে এক ধরনের যৌগ তৈরি হবে। যেটা খোলা স্থানে রাখলে মশা আর মানুষের শরীর আকৃষ্ট করবে না। ওই ওষুধগুলোর দিকেই যাবে। এর ফলে ওষুধগুলোর মাধ্যমে মশার পাকস্থলীতে একটি প্রেটিন ক্রিস্টাল তৈরি করবে। এতে মশা এবং লার্ভা দুটোরই বংশবিস্তার প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাবে।
টিমের সদস্য সৌরভ হোসেন বলেন, আমরা এই প্রজেক্টের জন্য ইউনিভার্সিটি ইনোভেশন হাব প্রোগ্রামের আওতায় ৫০ হাজার টাকার ফান্ড পেয়েছিলাম। এ টাকা দিয়েই আমরা এটা তৈরি করেছি। এ ছাড়াও এফবিসিসিআই ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (এফবিসিসিআই আইআরসি) ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) আয়োজিত প্রতিযোগিতায় সারা দেশ থেকে প্রায় সাড়ে চারশো উদ্ভাবনের মধ্যে নির্বাচিত সেরা দশে স্থান করে নিয়েছে ‘বাজ শিল্ড’। বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণার জন্য একটি ছোট ফান্ড দিয়েছে আয়োজক সংস্থা। তবে বৃহৎ আকারে ব্যবহার উপযোগী করতে আরও ফান্ড প্রয়োজন।
টিমের আরেক সদস্য মেফাদুজ্জামান রাতুল বলেন, এই প্রজেক্ট তৈরিতে আমরা কারিগরি সহায়তা দিয়েছি। এটা এখনো পুরোপুরি বাজারজাত করার মতো হয়নি। আমরা সবেমাত্র গবেষণা শেষ করে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে সফল হয়েছি। এটি নিয়ে আরও কাজ চলছে, শিগ্গিরই এটি সহজে ব্যবহার উপযোগী করা হবে।
এ বিষয়ে খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু অ্যাকাডেমিক পড়াশোনাতেই নয়, গবেষণা ও উদ্ভাবনী শক্তিতেও সারা দেশে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত ‘বাজ শিল্ড’ ভবিষ্যতে দেশের জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।