বাসস
  ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ২২:০৭

কন্যাশিশু নির্যাতন ও সহিংসতা থেকে উত্তরণে ১১টি সুপারিশ তুলে ধরেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৪ অক্টোবর ২০২৫ (বাসস) : কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সকল ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করাসহ কন্যাশিশুদের কল্যাণে ১১টি সুপারিশ তুলে ধরেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।

আজ শনিবার জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের আয়োজনে এবং এডুকো বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়। জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতার চিত্র পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক নিশাত সুলতানা, অ্যাডভোকেট ফাহমিদা রিংকী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক ও অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের জাতীয় সমন্বয়কারী আহসানা জামান এ্যানী।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের সমাজে নারী ও কন্যাশিশুদের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু এখনও তা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বাল্যকাল থেকেই নারীর প্রতি বঞ্চনা ও বৈষম্যের অবসান, সুযোগ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করা দরকার। কারণ নারীর অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তন হলে পুরো জাতির অবস্থাও পরিবর্তিত হবে।

সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সম্পর্কে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনায় পাঁচবার উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়নি। এই ঘটনায় মূলত নারী রাজনৈতিক অধিকার পরাজিত হয়েছে। কেউ জয়ী হয়নি, পুরুষতন্ত্র জয়ী হয়েছে।”

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বিগত সরকারের সময় মিথ্যা তথ্য, ভুল তথ্য, অপতথ্য আমাদের সবকিছু উইপোকার মতো ধ্বংস করে দিয়েছিল। বাল্যবিয়ের মতো একটি সংবেদনশীল সামাজিক বিষয় নিয়েও মিথ্যা তথ্য প্রদান করা হতো। তারা বাল্যবিয়ের সংজ্ঞাই পরিবর্তন করে ফেলেছিল। ফলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমাদের দীর্ঘদিনের অর্জন টেকসই হয়নি।

মূল প্রবন্ধে আহসানা জামান এ্যানী বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে নিকৃষ্ট রূপ হলো ধর্ষণ। ধর্ষণ ও গণধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের শিকার হতে হচ্ছে চার মাস থেকে এক বছর বয়সী শিশুদেরও। এর অন্যতম প্রধান কারণ আইন বাস্তবায়নে শিথিলতা।

সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের পক্ষ থেকে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’ অনুমোদন, শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সকল ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠনের কঠোর নির্দেশনা মনিটরিংয়ের ভিত্তিতে নিশ্চিতকরণ, কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ, শিশু সুরক্ষায় একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠনসহ ১১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।