শিরোনাম
ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন
নাটোর, ৩ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : মনোমুগ্ধকর রঙ আর রসে টইটুম্বুর ‘রঙ বিলাস’। জেলায় এ বছর ১০৯ হেক্টর জমিতে চিবিয়ে খাওয়ার আখ ‘রঙ বিলাস’ চাষ করা হয়েছে। এসব আখ থেকে পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার ৫০ টন রস। অর্থকরি এই আখ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে আবাদকৃত ১০৯ হেক্টর জমির মধ্যে সর্বোচ্চ ৬১ হেক্টর জমি চাষ হয়েছে বড়াইগ্রাম উপজেলায়। এছাড়া ৪৫ হেক্টর গুরুদাসপুর উপজেলায় এবং তিন হেক্টর জমি সিংড়া উপজেলায়। অর্থাৎ চলনবিল অধ্যুষিত তিনটি উপজেলাতেই শুধুমাত্র ‘রঙ বিলাস’ আবাদ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলনবিলের মাটি, পানি, আবহাওয়া এই আখ চাষের জন্যে উপযোগী।
বিগত ৩০ বছর ধরে ‘রঙ বিলাস’ আবাদকারী বড়াইগ্রাম উপজেলার মহিষভাঙা গ্রামের কৃষক গোলাম রসুল বলেন, আগামী মৌসুমে আবাদের জন্যে ইতোমধ্যে বীজতলায় এক হাজার চারা তৈরী করেছি। অল্প ক’দিনের মধ্যে এসব চারা সেচের উপযোগী নালাসহ তৈরীকৃত জমির জমিনে রোপন করবো। সারা বছর ধরে জমিতে আখ থাকে।
পরিচর্যা করতে হয়, ছত্রাকের আক্রমণের দিকে নজর রাখতে হয়।
আখ চাষের আদর্শ কৃষক গোলাম রসুল আরো বলেন, এ বছর তিন বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছি। দুই বিঘার আখ বিক্রি করেছি চার লাখ টাকায়। নাটোরের বাইরে থেকে আসা ব্যাপারীরা জমি থেকে আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। জমিতে একশ’ আখ বিক্রি করছি আড়াই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। আর বাজারে খুচরা বিক্রি করছি ৩০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত।
‘রঙ বিলাস’ চাষকারী অপর কৃষক রবিউল করিম বলেন, জমিতে চারা রোপনের পরে সাথী ফসল হিসেবে আমরা রসুন অথবা পেঁয়াজ আবাদ করি। ফলনও ভালো। এক বিঘা জমিতে ২৫ থেকে ৩০ মণ রসুন পাওয়া যায়। আর পেঁয়াজ চাষ করলে, আরো একটু বাড়তি ফলন, বিঘাতে ৪০ মণ পর্যন্ত পাওয়া যায়। সাথী ফসল চাষ করলে আখ আবাদের খরচ উঠে আসে। ফলে আখের বিক্রয় মূল্যের সবটাই মুনাফা। সাথী ফসলের সাথে আখ চাষ করলে বিঘা প্রতি দুই লাখ টাকা মুনাফা পাওয়া সম্ভব।
গোলাম রসুল এ বছর দুই বিঘা জমির আখ আগাম বিক্রি করতে পারায় ঐ জমিতে সুগন্ধি জাতের রোপা আমন ধান আবাদ করেছেন। ১০ মাস ধরে জমিতে আখ থাকলেও পরীক্ষামূলকভাবে এবারই বিরতির দুই মাসে জমিতে ধান রোপন করা হয়েছে। আবার আখের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে শুধু রসুন বা পেঁয়াজই নয়, অনেকেই মুগ ডালও চাষ করবেন। অত্যন্ত লাভজনক এই পদ্ধতি ব্যবহার করে উপজেলার কৃষকরা অনায়াসে লাভবান হতে পারেন বলে জানিয়েছেন উপজেলার বনপাড়া কৃষি ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে আমার ব্লকে ৩০০ বিঘা জমিতে ‘রঙ বিলাস’ আখ আবাদ হয়েছে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ জানান, ‘রঙ বিলাস’ আখ চাষের মাধ্যমে এই উপজেলার কৃষকদের আর্থিক অবস্থান সুসংহত হচ্ছে। কৃষি বিভাগ এই আখ চাষের সম্প্রসারণে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম খান বাসস’কে বলেন, ‘রঙ বিলাস’ আখ চাষ করে চলনবিল এলাকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। অদূর ভবিষ্যতে চিবিয়ে খাওয়ার এই আখ এলাকার অন্যতম অর্থকরি ফসলে পরিণত হতে যাচ্ছে।