শিরোনাম
বেলাল রিজভী
মাদারীপুর, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার কালকিনি উপজেলার সিডিখান এলাকার নতুনচর দৌতল খা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আড়িয়াল নদী। আর গত তিন মাসে এ আড়িয়াল খা নদীর ভাঙ্গনে ওই গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার এখন নিঃস্ব।
সরেজমিনে সিডিখান এলাকার নতুনচর দৌতল খা গ্রামে গিয়ে কথা হলে নদীর পাড়ের ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা ময়না বেগম বলেন, মোগো এক সময় সবই ছিল, এখন মোরা পথের ভিক্ষারী হয়ে গেছি। মোগো কৃষি জমি আর বসতবাড়িসহ সব কিছুই এখন নদীর পেটে। এখন শুধু স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছি। এক রাতেই চোখের সামনে সব নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। মোগো এখন পরের জায়গায় অস্থায়ী ঘর তৈরি করে থাকতে হচেছ। মোগো পাশের বাড়ির যারা রয়েছে তারও নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন গুনছে। মোগো যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই। স্বামীর কবর পর্যন্ত রাক্ষুসে আড়িয়াল নদী কেড়ে নিয়ে গেছে। আমাগো নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে আপনারা বাঁচান।
তার মত সব কিছু হারিয়ে এমন আহাজারি করেন শতশত অসহায় মানুষ। এমনকি তাদের শেষ ঠিকানা বসতবাড়িটি খুইয়ে এখন তাঁরা দিশেহাড়া হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার সিডিখান এলাকার নতুনচর দৌতল খা গ্রামের কালাম খা, আবদুর রব বেপারী, মোতালেব, হোসেন, সিদ্দিক, লিপি, রেনু বেগম, হুগলি বেগম, মহর কাজী, শেফালীসহ শতাধিক পরিবারের ফসলি জমি ও বসতবাড়ি বিলিন হয়ে গেছে।
এ ছাড়া বর্তমানে ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে নতুন চরদৌলত খা পাকা সড়ক, খানবাড়ি মাদরাসা, ৪৪নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতুন চরদৌলত খা জামে মসজিদ, নতুন চরদৌলত খা প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নতুন করে ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন দিদার সরদার, ফারুক সরদার, মহাসিন সরদার, নেয়ামুল কাজীর বসত বাড়ি, কুলসুম বেগম, সালেহা খানম, সৌরদ্দী হোসেন, রুবেলসহ অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি।
এ নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতে সম্প্রতি নতুনচর দৌলত খা গ্রামবাসী আড়িয়াল খা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা আড়িয়াল খা নদী ভাঙ্গন রোধে প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান এবং ভাঙ্গন কবলিত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সিডিখান এলাকার বাসিন্দা নেয়ামুল কাজী জানান, নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনকে অনেকবার বলা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের জানান, ভাঙ্গন রোধে সকল প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ উল আরেফিন বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের শিঘ্রই সহযোগীতা করা হবে।