বাসস
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:০০

সময়ের পরিক্রমায় রাজবাড়ীতে দুর্গাপূজার সেকাল একাল

রাজবাড়ীতে দুর্গোৎসব। ছবি: বাসস

\ মোশারফ হোসেন \

রাজবাড়ী, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় দুর্গাপূজা শুরু হয় সম্ভবত ১৯৫৪ সাল থেকে। তখন বাংলার হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক-ধর্মীয় উৎসব ছিল দুর্গাপূজা। সময়ের পরিক্রমায় পূজার যেমন আচার-অনুষ্ঠান সমৃদ্ধ হয়েছে, তেমনি সমাজ-সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি হিসেবেও ভিন্নতা তৈরি করেছে। একালের দুর্গোৎসব আর সেকালের দুর্গোৎসবের মধ্যে তাই মিল-অমিল দুটিই চোখে পড়ে।

রাজবাড়ীতে দুর্গাপূজা শুরু হয় রাজা "সূর্য কুমারের" আমল থেকে, প্রাচীন কালে হিন্দু জমিদাররাই এ পূজার যাবতীয় ব্যবস্থা করতেন। তখন দুর্গাপূজা ছিল মূলত জমিদার ও অভিজাত পরিবার কেন্দ্রিক। 

তখন রাজবাড়ীর আঙিনায় স্থাপিত হতো দেবীর প্রতিমা। পূজার দেখ ভাল এবং খরচ জোগাতেন জমিদার পত্নী, রাণীমাতা শরৎ সুন্দরী, তাকে প্রজা সাধারণ "রাণীমা" বলেই ডাকতেন। তার হাত দিয়েই অথিতি আপ্যায়ন থেকে সব কিছু তিনিই তদারকি করতেন।

সে কালের তথ্য কণিকা থেকে জানা যায়, পূজার শেষের দিনগুলোতে ১০৮ টি খাসি বলি দেয়া হতো। প্রজা সাধারণ সেখানে অতিথি হয়ে আসতেন, প্রসাদ পেতেন এবং পূজার আনন্দ ভাগ করে নিতেন। মেলা, যাত্রাপালা, পুঁথি পাঠ বা ঢাক-ঢোলের তাল ছিল সেই সময়ের পূজার প্রধান আকর্ষণ। আলোকসজ্জা বা জমকালো প্যান্ডেলের পরিবর্তে ছিল সরলতা, গ্রামীণ আবহ আর মিলনমেলার উচ্ছ্বাস। পূজার সামাজিক তাৎপর্য ছিল মানুষকে একত্রিত করা, গ্রামীণ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো।

আজকালের পূজা মূলত সার্বজনীন। শহর থেকে গ্রাম সবখানে কমিটি গঠন করে যৌথভাবে পূজা আয়োজন করা হয়। দৃষ্টিনন্দন প্যান্ডেল, বিদ্যুতের ঝলমলে আলো, থিম ভিত্তিক সাজসজ্জা, দস্যুতা রোধে সি সি ক্যামেরা, বাউন্ডারি দিয়ে সীমানা তৈরি  করে দেয়া। সব কিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া।

আধুনিক শিল্পকলার প্রতিযোগিতা সবই এ কালের পূজাকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনে পূজার খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। 

পূজা এখন শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সাংস্কৃতিক উৎসবও। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সরকারি উদ্যোগ ও প্রশাসনিক তৎপরতাও উৎসবকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করে তুলছে।

যেখানে সেকালের পূজা ছিল গণ্ডিবদ্ধ, অভিজাত কেন্দ্রিক ও সরল আনন্দের, একালের পূজা সেখানে সার্বজনীন, বহুমাত্রিক ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। তবে মিলের জায়গা একটাই মানুষকে একত্রিত করার শক্তি। দুর্গোৎসব আজও মিলনের উৎসব, ভ্রাতৃত্বের প্রতীক এবং বাংলার ঐতিহ্যের গর্ব।

একালের সাজসজ্জা যতই আধুনিক হোক, সেকালের সরলতা ও আন্তরিকতার স্মৃতি আজও মানুষের মনে রয়ে গেছে। তাই দুর্গোৎসব আমাদের ঐতিহ্য ও সময়ের পরিবর্তনের এক কালের সাক্ষী।