শিরোনাম
।। দিলরুবা খাতুন।।
মেহেরপুর, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস): রাজহংসের রূপ, সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে কত বন্দনাই তো করেছেন কবি সাহিত্যিকরা। কবির কলমে, প্রেমিকের আরাধনায় রাজহংস পেয়েছে বিশেষ মর্যাদা। আর বাড়ির উঠোনে কিংবা পুকুরে রাজহাঁসের সুউচ্চ গ্রীবা, ধীরস্থির চাহনি এবং নান্দনিক পথ চলার দৃশ্য পারিপার্শ্বিক পরিবেশটাই যেন বদলে দেয়। মেহেরপুরের শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে রাজহাঁসের গুরুত্ব তাই অসীম।
অন্যদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে রাজহাঁস পবিত্রতা, আনুগত্য, ঐক্য এবং প্রেমের প্রতীক। এটি রোমান্টিকতা, প্রেম এবং ভক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। যে কোনও ব্যক্তির জীবনে রাজহাঁস মানে হল তার জীবনে একটি ঐশ্বরিক এবং শুভ সময় প্রবেশ করেছে।
তবে প্রেম, সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের প্রতীক রাজহাঁসও মানবজাতির রসনা থেকে মুক্তি পায়নি। তাই মেহেরপুর জেলাবাসীর কাছে অন্যতম জনপ্রিয় খাবার হয়ে উঠেছে রাজহাঁসের মাংস। চাহিদার কারণে জেলায় রাজহাঁস পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গ্রামের রাস্তা ও রাস্তার পাশের ডোবা-নালাতে দলবদ্ধ রাজহাঁস চোখে পড়ে। শহর ও গ্রামের মেয়েরা বাড়িতে মিনি খামার গড়ে রাজহাঁস পালন করে বাড়তি আয় করছেন। দুস্থ পরিবারের আর্থিক সংকট মোকাবেলাতে ও সহায়তা করছে রাজহাঁস পালন।
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সময় থেকে রাজহাঁস পালনের প্রচলন। প্রধানত মাংস উৎপাদনের জন্য রাজহাঁস পালন করা হতো। বর্তমানে মাংসের চাহিদার পূরণের পাশাপাশি রাজহাঁসের পালক দিয়ে গদি, লেপ, তোশক, কুশন তৈরি করা যায়। রাজহাঁসের বুক পিঠ এবং পেটের নরম পালকের চাহিদার কারণে এই অঞ্চলে ও রাজহাঁস পালন হয়ে আসছে। প্রতিবছরই রাজহাঁসের সংখ্যা বাড়ছে। মেহেরপুরের গোভীপুর, হরিরামপুর , তেঘরিয়া, রাধাকান্তপুর, কুলবাড়িয়া, চাঁদপুর, বৈকুণ্ঠপুর, সুবলপুর, নিশ্চিন্তপুর, আমঝুপি, গাড়াবাড়িয়া, দারিয়াপুর, গাংনী, বামুন্দী, রামকৃষ্ণপুর ধলা, বিল ধলা, ভোমরদহ এবং কালিগাংনী গ্রামে বেশি রাজহাঁস পালন হয়। এসব গ্রামের রাস্তায় রাজসিকভাবে রাজহাঁসের বিচরণ চোখে পড়ে।
মেহেরপুরের ভৈরব নদের দুই পাশে ও পানিতে রাজহাঁসের ঝাঁক বেঁধে চলতে দেখা যায়। এসব হাঁস জলাশয় থেকে খাদ্য কিংবা ঘাস খেয়ে তাদের খাদ্য চাহিদা মেটায়।
রাজহাঁস হচ্ছে একমাত্র প্রজাতি যা গরু-ছাগলের মতো ঘাস-লতাপাতা খেয়ে থাকে। সাধারণত রাজহাঁস তার প্রয়োজনীয় খাদ্যের অর্ধেকের বেশি খাদ্য ঘাস খেয়ে পূরণ করে।
এটি পালন করার জন্য তৃণময় নিম্নভূমি বিশিষ্ট এলাকা প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এ জন্য তৃণময় এলাকায় রাজহাঁস পালন করলে খাদ্য খরচ কম হয়। দেশি জাতের রাজহাঁস সারা বছরে প্রায় ২০-২৫ টি ডিম দিয়ে থাকে । তবে মজার ব্যাপার হলো এ ডিমের আকার এত বড় যে, তা দেশী হাঁসের চেয়ে আড়াই গুণ এবং মুরগির ডিমের তুলনায় প্রায় ৪গুণ বড় । বড় রাজহাঁস ৪৫০-৫০০টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। রাজহাঁসের বাচ্চা ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করে । রাজহাঁস একটি পরিবারের জীবন ও জীবিকার অন্যতম আয়ের উৎস হতে পারে। তাই মেহেরপুরে রাজহাঁস পালন ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের হানুফা বেগম বাসসকে জানান, তিনি সব সময় ৩০-৪০ টা রাজহাঁস পালন করেন। পরিবারের মাংসের চাহিদা মিটিয়ে হাঁস বিক্রির টাকা দিয়েই তিনি হাঁসের খাবার কেনেন।
গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের জেবুন নেছা জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেদের সাথে থাকেন। প্রথমে শখের বশে লালন-পালনের জন্য দুটো হাঁস কেনেন। প্রথমে ১০ টি ডিম পাড়ে। ১০ টি ডিম বসিয়ে বাচ্চা তোলেন। দুইটা হাঁস থেকে বর্তমানে তার ৮৫ টি রাজহাঁস আছে। প্রতিটি হাঁস ৪-৬ কেজি পর্যন্ত হয়। সারাদিন বাগানে, বিলে হাঁস চরান। এতে বাড়তি খাবারের তেমন প্রয়োজন হয়না। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে হাঁস বিক্রির টাকা দিয়েই ওষুধপথ্য কেনেন তিনি।
মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুব্রত কুমার ব্যানার্জী বাসসকে বলেন, লাভজনক হওয়ায় জেলায় হাঁস পালন বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজহাঁসের রোগ-ব্যাধি কম হয়। ভয় শুধু ডাক প্লেগ রোগ নিয়ে। মাঝে মাঝে এ রোগের প্রতিরোধক ভ্যাকসিন দিলে আর ভয় থাকে না।