বাসস
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৩

মহালয়ার মধ্যদিয়ে দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু 

ছবি : বাসস

ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন ‘শুভ মহালয়া’। 

আজ রোববার শুভ মহালয়ার মধ্যদিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। ভোরের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি ঘটিয়ে সূচনা হয় দেবীপক্ষের। চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে মর্ত্যে দেবী দুর্গাকে আহ্বান জানানো হয়। চলে দেবীর চক্ষু দানের প্রস্তুতি।

মহালয়া উপলক্ষে চন্ডীপাঠ ছাড়াও বিভিন্ন মন্দির ও মন্ডপে ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, আজ দশভুজা শক্তিরূপে দেবী দুর্গা মন্ডপে মন্ডপে অধিষ্ঠান করবেন। 

আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের মূল পর্ব শুরু হবে। আর ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী এই উৎসব সমাপ্ত হবে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, শুভ মহালয়ার দিনে কৈলাশ থেকে মা দুর্গা পিতৃগৃহে আগমন করেন এবং দেবীপক্ষের সূচনা হয়। তাই মহালয়া থেকে দুর্গা উৎসবের আমেজ শুরু হয়। দুর্গাপূজার সূচনার এই দিনটি সারা দেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হয়েছে।

দেবীপক্ষের সূচনালগ্নে সব পূজামন্ডপে পুরোহিতের ভক্তিকণ্ঠে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা-নমস্তৈস্য নমস্তৈস্য নমোঃ নমোঃ’ মন্ত্র উচ্চারণ শোনা যায়। সকাল ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সকাল সাড়ে ৭টায় পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় তিল-তর্পণ অনুষ্ঠান হয়। আর সকাল সাড়ে ৮টায় মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা হয়। সকাল ১১টা পর্যন্ত বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা আবাহন ও ভক্তিমূলক সংগীত পরিবেশন করেন।

ঢাকেশ্বরী দুর্গাপূজা মন্ডপের পুরোহিত বরুণ চক্রবর্তী বলেন, দেশ ও জাতির শুভ কামনার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। মহালয়ার মাধ্যমে দুর্গোৎসবের ক্ষণগণনা শুরু হয়। এদিন দেবী দুর্গার ঘট বসানো হয়। এর মাধ্যমে দেবী দুর্গা বেলতলায় অবস্থান নেন। অর্থাৎ কৈলাশ (স্বর্গলোক) থেকে মর্ত্যে (বেলতলায়) আসবেন দেবী দুর্গা।

মহালয়া-১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষ্যে ভোরে বনানী মাঠে দেবীবরণের আয়োজন করে গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে নৌ পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এ দিন ভোরে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন অতিথি ও আয়োজকবৃন্দ। 

এদিকে, শুভ মহালয়া তিথিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মন্দির ও পূজামন্ডপগুলোতে ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। চন্ডীপাঠ ছাড়াও মঙ্গলঘট স্থাপন এবং ঢাক-কাঁসর ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান জানান ভক্তরা। 

রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দিরে সেই আনুষ্ঠানিকতা দেখা গেছে। সেখানে মিশনের অধ্যক্ষ চন্ডীপাঠ ও চন্ডীপূজা ছাড়াও আবাহন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। 

এছাড়াও, স্বামীবাগের লোকনাথ মন্দির, রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামন্ডপ এবং খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের পূজামন্ডপসহ রাজধানীর অন্যান্য মন্দির ও মন্ডপেও মহালয়ার অনুষ্ঠান ছিল।

শারদীয় দুর্গোৎসবের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, এ বছর সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মন্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। 

এরমধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ২৫৮টি মন্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।